দীর্ঘ তিন মাস ২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২ আগস্ট মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে শুরু হয়েছে মাছ শিকার। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলাধারে মাছ শিকারের মাধ্যমে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে রাঙামাটির মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলোতে।
রোববার (৩ আগস্ট) ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়েছে শুল্কায়ন কার্যক্রম। সকাল থেকেই রাঙামাটির বিএফডিসি ঘাট, কাপ্তাই, মারিশ্যা ও মহালছড়ির মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলোতে শুরু হয় ব্যস্ততা।
ছোট ইঞ্জিনচালিত বোটে করে জেলেরা মাছ নিয়ে ঘাটে আসছেন, অন্যদিকে বাজারজাতকরণ ও শুল্ক প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে এই অবতরণ কার্যক্রম।
মৎস্য ব্যবসায়ী ও সংগঠনের নেতা আব্দুল শুক্কুর জানান, প্রচুর ছোট মাছ ধরা পড়েছে, তবে তিনি মনে করেন, যদি আরও ১৫-১৮ দিন পর মাছ ধরা শুরু হতো, তাহলে মাছের আকার আরও বড় হতো।
এবার বেশিরভাগ মাছই চাপিলা ও কাচকি প্রজাতির। তবে হ্রদে পানি বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে মাছের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম। জেলার বাইরে ছোট মাছের ভালো চাহিদা থাকায় ব্যবসায়ীরা আশাবাদী।
তবে মাছের আকার নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা গত বছরের তুলনায় কম হওয়ায় মাছের পরিপক্বতা পুরোপুরি হয়নি, যার ফলে মাছ ছোট হয়েছে। তা ছাড়া হ্রদে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় বেশিরভাগ এলাকায় এখন কাচকি ও চাপিলা মাছই প্রাধান্য পাচ্ছে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদ থেকে প্রায় ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছিল। চলতি মৌসুমে শুরুর দিক থেকেই মাছের অবতরণে গতি থাকায় এবং নিষেধাজ্ঞা কম হওয়ায় রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড গড়ার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা, যদিও মাছের আকার নিয়ে তারাও কিছুটা উদ্বিগ্ন।
বিএফডিসি রাঙামাটির ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম জানান, গত বছর কাপ্তাই হ্রদ থেকে ৭ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন মাছ আহরণ করা হয়েছিল, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৯ কোটি টাকা। এবার পানি কমলে কার্প জাতীয় বড় মাছ ধরা পড়বে বলে আশা করছেন তিনি। এখন পর্যন্ত চাপিলা ও কাচকি জাতীয় ছোট মাছই বেশি ধরা পড়ছে।
সব মিলিয়ে নিষেধাজ্ঞা শেষে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা শুরু হওয়ায় ঘাটগুলোতে ফিরে এসেছে পুরনো ব্যস্ততা ও প্রাণচাঞ্চল্য।