একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অন্যদিকে গাজা যুদ্ধ। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ইস্যুতে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ দোলাচলের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। উচ্চহারে শুল্কারোপের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বেড়েছে সম্পর্কের বৈরিতা। এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বেড়েছে ছাঁটাই আতঙ্ক। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের পর বিদায় বেলায় দেখা যাচ্ছে অশ্রুসজল দৃশ্য। প্রিয় কর্মস্থল থেকে চোখের জলে বিদায় নিচ্ছেন সদ্য চাকরিচ্যুত কর্মীরা। মন্ত্রণালয়ের পুনর্গঠনের উদ্দেশেই একযোগে এত বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে বলে জানায় ওয়াশিংটন। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলছেন অনেকে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। সেই উদ্দেশেই শুক্রবার একযোগে ১ হাজার ৩৫০ জন কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। মার্কো রুবিও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম এত বড় ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটল। এ বিষয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রণালয়ের পুনর্গঠনের উদ্দেশেই কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে তারা। তবে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ সাবেক ও বর্তমান ফেডারেল কর্মীরা। এমনকি সরকারি কর্মী ছাঁটাইয়ের এ প্রক্রিয়াকে ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ কাজ বলে দাবি অনেকের।
সিএনএনের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি সরকারি চাকরিজীবী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে এক দিনে ছাঁটাই ১ হাজার ৪০০ কর্মী, সমালোচনা তুঙ্গে! চোখে অশ্রু, কণ্ঠে ক্ষোভ চাকরি হারানোর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন বহু কর্মী। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে শুক্রবার এক দিনেই ছাঁটাই করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। চাকরির পেছনে জীবনভর শ্রম দেওয়া অনেকের জন্য এমন পরিণতি যেন বজ্রাঘাতের মতো। মাথার ওপর থেকে যেন ছাদ সরে গেছে, এমনই ভাষায় নিজেদের হতাশা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইলন মাস্কের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সির (ডিওজিই) কর্মী ছাঁটাই ও সরকারি ব্যয় হ্রাস কর্মসূচির শিকার হলেন শত শত আবহাওয়া পূর্বাভাসকারী এবং ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) কর্মীরা। বিপুলসংখ্যক এসব কর্মীকে বৃহস্পতিবার বরখাস্ত করা হয় বলে জানান আইনপ্রণেতা ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। চাকরি হারানো কেন্দ্রীয় সরকারের এ কর্মীদের মধ্যে অনেক আবহাওয়াবিদও রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে জাতীয় আবহাওয়া সেবা বিভাগের বিভিন্ন কার্যালয় থেকে স্থানীয় আবহাওয়া নিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন তারা। ডেমোক্র্যাটরা এক বিবৃতিতে এ পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন। তারা বলছেন, সিভিল সার্ভিস ও ফরেন সার্ভিসের শত শত কর্মীকে ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। দ্বিতীয়বারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরই প্রশাসনিক ব্যয় সংকোচের কথা বলেন ট্রাম্প। তার পর একাধিক দপ্তর থেকে বহু কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। তবে অধস্তন আদালতের এক রায়ে গণছাঁটাই প্রক্রিয়া কিছু দিনের জন্য থমকে ছিল। গত ৯ জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট জানায়, এ বিষয়ে আপাতত এগোতে পারবে ট্রাম্প প্রশাসন। তারপরই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে গণছাঁটাইয়ের এ খবর এল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিকে তার ‘আমেরিকা সর্বাগ্রে’ কর্মসূচির ছাঁচে ঢেলে সাজানো নিশ্চিত করার যে চেষ্টা নিয়েছেন, তারই প্রথম ধাপ হিসাবে পররাষ্ট্র দপ্তরের এই কর্মী ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ। সমালোচকরা বলছেন, এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক স্বার্থ রক্ষা ও প্রচারে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। ছাঁটাইয়ের তালিকায় রয়েছেন এক হাজার ১০৭ জন সিভিল সার্ভিস কর্মী এবং ২৪৬ জন ফরেন সার্ভিস অফিসার, যারা সবাই যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ছিলেন। বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্র যখন একাধিক সংকট মোকাবিলা করছে (রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজা সংকট ও ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা) তখনই এই পদক্ষেপ এলো। পররাষ্ট্র দপ্তরের অভ্যন্তরীণ এক নোটিশে বলা হয়েছে, স্বেচ্ছা অবসরসহ মোট ছাঁটাইয়ের সংখ্যা প্রায় তিন হাজারে দাঁড়াবে। এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট নীতির আলোকে বৈদেশিক নীতিকে পুনর্গঠনের প্রথম ধাপ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সাবেক কূটনীতিক ও সমালোচকরা সতর্ক করে বলেছেন, ফরেন সার্ভিস অফিসারদের ছাঁটাই চীনের ও রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক প্রভাবের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রকে দুর্বল করে তুলবে। ভর্জিনিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কেইন বলেন, এটি একটি চরম ভুল সিদ্ধান্ত। যখন চীন তার কূটনৈতিক উপস্থিতি বৈশ্বিকভাবে বাড়াচ্ছে এবং রাশিয়া ইউক্রেনে নিষ্ঠুর আগ্রাসন চালাচ্ছে, তখন আমরা আমাদের কূটনৈতিক ফ্রন্ট দুর্বল করছি। ওয়াশিংটনের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ভবনের লবিতে ছাঁটাই হওয়া সহকর্মীদের জন্য সহকর্মীদের ক্ল্যাপ-আউট (সংবর্ধনা) আয়োজন করতে দেখা গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :