সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসানুজ্জামান হাসান, কালীগঞ্জ

প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম

কাব্য রত্নাকারের জন্মভিটায় শুধুই স্মৃতিহীন নীরবতা

হাসানুজ্জামান হাসান, কালীগঞ্জ

প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম

কাব্য রত্নাকারের জন্মভিটায় শুধুই স্মৃতিহীন নীরবতা

লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক ঘেঁষে কাকিনা বাজার বাসস্ট্যান্ডে তালাবদ্ধ জীর্ণ ফটক। ফটকের দুপাশে জায়গা দখল করে বসানো হয়েছে দোকান। ফটকের ভেতরে-বাইরে আবর্জনার স্তূপ। ভেতরে থাকা দ্বিতল ভবনের গায়ে অনেক দিন পড়েনি রঙের প্রলেপ, ভবনে ঝুলে থাকা সাইনবোর্ডটিও মলিন। এই চিত্র কবি শেখ ফজলল করিম স্মৃতি গণপাঠাগারের।
কবি শেখ ফজলল করিমকে চিনতে যাদের অসুবিধা হচ্ছে, তাদের জন্য কবির বিখ্যাত কয়েকটি পঙ্ক্তি তুলে ধরে হলোÑ ‘কোথায় স্বর্গ?/ কোথায় নরক?/ কে বলে তা বহুদূর?/ মানুষেরই মাঝে স্বর্গ-নরক/ মানুষেতে সুরাসুর’। ব্রিটিশ-ভারতের অন্যতম আলোচিত বাঙালি কবি শেখ ফজলল করিমের স্মৃতি ধরে রাখতে ২০০৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় এক নেতার রোষানলে পড়ে পাঠাগারটি। ফলে সেটির দিকে আর কেউ তাকায়নি, দীর্ঘদিন ধরে উদ্যোগের অভাবে পাঠাগারটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। কবির জন্মভিটায় থাকা স্মৃতিচিহ্নগুলোও যেন হারাতে বসেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।
বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম শেখ ফজলল করিম। যিনি কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনায় ১৮৮৩ সালের ১৪ এপ্রিল জন্মেছিলেন। ১৯৩৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মভিটায়ই ইন্তেকাল করেন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে নানা রচনার জন্য তিনি ‘সাহিত্যবিশারদ’, ‘কাব্যরতœাকার’ ও ‘নীতিভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কবি স্মৃতি পাঠাগারের পাশ দিয়ে মহাসড়ক থেকে নেমে যাওয়া সড়ক ধরে ভেতরের দিকে খানিক হাঁটলেই ‘কবিবাড়ি’। বাড়ির উঠানের একপাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন শেখ ফজলল করিম। টিনশেডের আধাপাকা বাড়ির একটি কক্ষে এখনো রয়েছে কবির কিছু স্মৃতিচিহ্ন, যেগুলো যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে প্রায় নষ্টের উপক্রম। সেখানে রয়েছে কবির ব্যবহৃত চেয়ার, খাট, ব্যবহৃত টুপি, দোয়াত-কলম, ছোট্ট কুরআন শরিফ, ম্যাগনিফায়িং গ্লাস ও কিছু বোতাম। কবির টানে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটক এলে বাড়িতে থাকা কবির একজন নাতবউ কিছু সময়ের জন্য ঘরটি খুলে দেন। সেখানে নেই দর্শনার্থীদের জন্য সামান্য বসার ব্যবস্থাটুকুও। কবির স্মৃতি বা বাড়িটি দেখভালের মতো উল্লেখ করার মতো কেউ নেই সেখানে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু শেখ ফজলল করিমের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীর দিনটিতে তার কক্ষের তালা খোলা থাকে, বছরের বাকি সময় তালাবদ্ধ।
স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় কয়েকজনের উদ্যোগে বেশ কয়েক বছর আগে কবি স্মৃতি পাঠাগারটি বছরখানেক খোলা ছিল। পরে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় সেটি আবারও বন্ধ হয়ে যায়। এখন দখল-দূষণে দিনে দিনে পাঠাগারটিও যেন পরিত্যক্ত হয়ে পড়ছে। ২০০৫ সালে কবির স্মৃতি রক্ষার্থে তৎকালীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর উদ্যোগে জেলা প্রশাসন পাঠাগারটি নির্মাণ করেছিল।
অভিযোগ রয়েছে, কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদের পলাতক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা তাহির তাহু কবি শেখ ফজলল করিম স্মৃতি গণপাঠাগারের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। সভাপতি হয়েও পাঠাগার চালু কিংবা কবির স্মৃতি রক্ষায় নেননি কোনো উদ্যোগ। 
স্থানীয় কলেজ শিক্ষার্থী ও লেখক আহেদুল ইসলাম আদেল জানান, ‘কবির জন্ম ও মৃত্যু দিবসে মাঝেমধ্যে হয়তো ছোটখাটো কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় স্থানীয়ভাবে। এরপর আর কেউ খোঁজ রাখেন না।’ লালমনিরহাট সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ মাঝেমধ্যে উদ্যোগ নেয়।
স্কুল শিক্ষার্থী মাহমুদা আক্তার বলে, ‘স্মৃতিচিহ্ন রক্ষার অভাবে আমাদের বাড়ির পাশের কবি সম্পর্কে বলতে গেলে তেমন কিছুই জানি না। তাকে জানার জন্য গড়ে তোলা পাঠাগারটিও কোনো দিন খোলা পাইনি। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো একদিন তার চিহ্ন হারিয়ে যাবে।’ 
কাকিনা বাজারের ব্যবসায়ী শেখ ফিরোজ, যিনি কবির পুতি (নাতির ছেলে)। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত থেকে প্রচুর মানুষ কবিবাড়িতে এখনো আসেন। ‘কবির তিন প্রজন্ম শেষ হয়ে গেছে। এখন আমরাও লোকের অভাবে কবির স্মৃতি রক্ষা করতে পারছি না। এর জন্য সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।’ আক্ষেপ করে তিনি আরও বলেন, ‘ফজলল করিমের বিখ্যাত কবিতা ‘কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক’ একসময় পাঠ্যবইয়ে ছিল। কিন্তু পরে সেটি তুলে দেওয়া হয়। পুনরায় পাঠ্যবইয়ে কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমি নিজেও একজন বইপ্রেমী মানুষ। কালীগঞ্জে কিছুদিন আগে এসেছি। পাঠাগার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে কবির স্মৃতিচিহ্ন রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে সম্প্রতি কবিবাড়ির গেটের বিষয়ে একটি আবেদন পেয়েছিলাম। সেটি বরাদ্দের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!