ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

‘২ মিনিটে সব টিকিট শেষ, এটা কোনো সিস্টেম হতে পারে না’

সিলেট ব্যুরো
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২৫, ০৩:২৩ পিএম
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে আকস্মিক পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সারওয়ার আলম। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ট্রেনের টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে বড়ধরনের ত্রুটি রয়েছে রেলের অনলাইন সিস্টেমে, এমন মন্তব্য করেছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সারওয়ার আলম। তিনি বলেন, “মাত্র ২ মিনিটে সব টিকিট শেষ হয়ে যাচ্ছে, এটা কোনো সিস্টেম হতে পারে না।”

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

ডিসি জানান, “ম্যানুয়াল বিক্রিতে যেমন কালোবাজারি হতো, এখন অনলাইনেও একই কাজ হচ্ছে। সিন্ডিকেট তৈরি করে অনেকগুলো অ্যাকাউন্ট দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই সব টিকিট কিনে নিচ্ছে। ফলে সাধারণ যাত্রীরা টিকিট পাচ্ছেন না, অথচ কালোবাজারিরা অনায়াসে তা বিক্রি করছে দ্বিগুণ দামে।”

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “আজকের সকালে একটি ট্রেনের জন্য মাত্র ১টি টিকিট বিক্রি হয়েছে স্টেশন কাউন্টার থেকে, অথচ অনলাইনে বিভিন্ন জায়গা থেকে কাটা হয়েছে প্রায় ২০০টি। এটি খুবই অস্বাভাবিক।”

জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম আরও বলেন, “এই সিন্ডিকেটে রেলওয়ের কোনো কর্মী বা স্থানীয় কেউ জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রেলের টিকিট সেবাকে স্বচ্ছ ও যাত্রীবান্ধব করতে হলে এসব অনিয়ম বন্ধ করতেই হবে।”

পরিদর্শনের সময় স্টেশন ছিল পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি। কোনো কালোবাজারির দেখা মেলেনি। রেলওয়ে কর্মকর্তারাও জানালেন, “এখানে টিকিট কালোবাজারি নেই।” তবে যাত্রীদের অভিজ্ঞতা বলছে ভিন্ন কথা। তারা জানান, “অনলাইনে টিকিট পাওয়া যায় না, কাউন্টারেও মেলে না। শেষ পর্যন্ত বেশি দামে কিনতে হয় কালোবাজারিদের কাছ থেকে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের কিছু অভ্যন্তরীণ কর্মী ও প্রভাবশালী মহলের মদদে এই টিকিট সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে।

ডিসি সারওয়ার আলম বলেন, “আমরা এমন একটি সিস্টেম চালুর চেষ্টা করছি, যাতে এনআইডি ছাড়া কেউ টিকিট কাটতে না পারে। এতে করে এক ব্যক্তি একাধিক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে টিকিট নিতে পারবে না। ফলে কালোবাজারি অনেকটা বন্ধ হয়ে যাবে।”

এছাড়া, যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন এবং ভিড় সামাল দিতে সিলেট রুটে বিশেষ কোচ ও স্পেশাল ট্রেন চালুর বিষয়েও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

রেলওয়ের জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বলেন, “কিছু অসাধু ব্যক্তি রেলের জমিতে স্থাপনা গড়ে তুলেছে। এসব দ্রুত উচ্ছেদ করা হবে।” পাশাপাশি স্টেশনে যাত্রীদের নিরাপত্তা বাড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে যাত্রীদের অনেকেই ডিসির এ অভিযানকে সাধুবাদ জানালেও অনেকে এটিকে 'লোকদেখানো' বলেই আখ্যা দেন। তারা বলেন, “অভিযান চলাকালে সবাই সেজেগুজে থাকে, কিন্তু পরদিন থেকেই আবার আগের মতো টিকিট না পাওয়া, আর কালোবাজারিদের দাপট, সব ফিরে আসে।” এখন প্রশ্ন উঠেছে, এই অভিযানের পর বাস্তবেই কি কিছু বদলাবে?