শখ থেকেই শুরু, এখন সেটাই হয়ে উঠেছে জীবনের পেশা। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শালিয়াবহ দক্ষিণপাড়া গ্রামের ইদ্রিছ আলী (৭০) এখন একজন পরিচিত সাপ শিকারি। ভয়ংকর এই কাজেও তিনি খুঁজে পান তৃপ্তি। এলাকার মানুষকে সাপের ভয় ও বিপদ থেকে রক্ষা করাটাই হয়ে উঠেছে তার জীবনের এক বিশেষ দায়িত্ব।
একসময় বড়শি দিয়ে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতেন ইদ্রিছ আলী। তবে পানিতে মাছ ধরতে গিয়েই বারবার সাপের মুখোমুখি হতে হতে সাপের সঙ্গে একপ্রকার মানসিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
প্রায় তিন বছর আগে, এক বাড়িতে সাপ ঢুকে পড়ার খবর পেয়ে সাহস করে প্রথমবার সাপ ধরেন। সেই থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
ইদ্রিছ আলী বলেন, ‘পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় আমাদের গ্রামে সাপের উপদ্রব বেশি। আমি কোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করি না, শুধু সাহস, ধৈর্য আর অভিজ্ঞতা দিয়েই সাপ ধরি। এখন এটা একরকম অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।’
তিনি জানান, সাপ ধরার বিনিময়ে টাকাপয়সা কখনোই মূল বিষয় মনে করিনি। কেউ খুশি হয়ে ২০ টাকা দেয়, কেউ বা ৫০০। তবে কখনো কারও সঙ্গে দরদাম করি না।
তিনি মনে করেন, ‘মানুষের উপকার করাটাই আমার বড় কথা। আর আমি তো গরিব মানুষ, মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলেই শান্তি পাই।’
এদিকে গত ১৫ দিনেই তিনি আশপাশের গ্রাম থেকে ১০০টির বেশি সাপ ধরেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তার মতে, মোবাইলে খবর পেলেই ছুটে যান। শুধু নিজের এলাকা নয়, আশপাশের উপজেলা বা জেলার গ্রাম থেকেও তার ডাক পড়ে। তবে বয়সের কারণে এখন দূরে যেতে আগ্রহ কম।
সাপ ধরতে গিয়ে একাধিকবার সাপের কামড়ও খেয়েছেন তিনি। ছেলে মাসুদ বলেন, ‘‘আমরা অনেকবার নিষেধ করেছি। বলেছি, বয়স হয়েছে, এখন এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ না করাই ভালো। কিন্তু বাবা শোনেন না। বলেন, ‘মানুষের উপকার করছি, মরলে মরব।’’
ইদ্রিছ আলীর পরিবার তার প্রতি গর্বিত হলেও পেশাটিকে ঘিরে তাদের মধ্যে চিন্তারও অভাব নেই। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে চান তিনি এখন বিশ্রাম নিন।
তবে বিশ্রাম প্রসঙ্গে ইদ্রিছ আলী বলেন, ‘যেদিন আমার হাত কাঁপবে, চোখ ঝাপসা দেখবে সেদিন নিজে থেকেই সরে যাব।’
প্রতিবেশী আব্দুল আজিজ বলেন, ‘এই বয়সেও ইদ্রিছ সাহস করে যেভাবে সাপ ধরে, তা সত্যিই বিস্ময়কর। আমরা যেখানে ভয় পেয়ে দূরে থাকি, তিনি সেখানে গিয়ে বিপদ মোকাবিলা করেন।’
সরকারি জিবিজি কলেজের সাবেক প্রাণিবিজ্ঞান অধ্যাপক যুলফিকার ই হায়দার বলেন, ‘সাপ পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। ইদ্রিছ আলীর মতো মানুষ যদি সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ পেয়ে সাপ সংরক্ষণের সুযোগ পেতেন তবে কাজটা আরও পরিবেশবান্ধব ও কার্যকর হতো।’
তবে ইদ্রিছ আলীর একটাই দুঃখ, ধরা সাপগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন না। অনেকেই তার মাধ্যমে সাপ ধরিয়ে পরে মেরে ফেলে।
সাপগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার প্রসঙ্গে ইদ্রিছ আলী বলেন, ‘সাপ তো আমাদের শত্রু না। আমি চাই এগুলো কোথাও ছেড়ে দিই, কিন্তু জায়গা পাই না। সরকার যদি একটা সংরক্ষণ কেন্দ্র দিত, তাহলে আমি সাপগুলো জীবিত অবস্থায় ছেড়ে দিয়ে আসতাম।’