স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে চলছে রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। রয়েছে চিকিৎসকসহ নানা সংকট। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে এরই মধ্যে বেড়েই চলেছে রোগীদের চাপ।
জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, ওষুধ, যন্ত্রাংশ সংকট রয়েছে। এ ছাড়া অপরিচ্ছন্ন স্যাঁতস্যাঁতে ফ্লোর, দুর্গন্ধে ভরা ওয়ার্ড, নেই জেনারেটর ব্যবস্থা, সঠিক পরিমাণে খাবার না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
টানা এক সপ্তাহের অধিক সময় ধরে দাবদাহের কারণে প্রতিনিয়ত ভর্তি হচ্ছে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড ও হিটস্ট্রোক আক্রান্ত রোগী।
এদিকে, ভ্যাপসা গরমে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। যার কারণে রোগীর সংখ্যা আগে তুলনায় তিনগুণ বেড়েছে। বেড কম থাকায় মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।
শুক্রবার (১৩ জুন) সরজমিনে দেখা গেছে, রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শতাধিক রোগী। রোগীদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও সেবিকাদের।
রোগীদের বেডে জায়গা না হওয়ায় হাসপাতালের স্যাঁতস্যাতে মেঝেতেই দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা। রোগীদের সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি লক্ষ করা গেছে। তাই পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে অনেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
রোগীদের ওয়ার্ডে ঢুকতেই নাকে ভেসে আসে দুর্গন্ধে ভরা বাতাস, টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। এখানে সুস্থ হয়ে ওঠার একমাত্র ভরসা যেন সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত।
ওষুধ সংকট থাকায় ওই সময় ভর্তি হতে আসা মহসিনকে দায়িত্বে থাকা সেবিকা কাগজে ৩টি ওষুধের নাম লিখে দিয়ে বলেন, ‘এগুলো এখানে সাপ্লাই নেই, কিনে আনতে হবে।’

হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে বাড়ে বিপত্তি, নেই জেনারেটর ব্যবস্থা। ছোট মেয়েকে নিয়ে ভর্তি থাকা শহিদুল বলেন, ‘ওষুধ খেয়ে যতটুকু সুস্থ হয়, বিদ্যুৎ চলে গেলে গরম আর দুর্গন্ধে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে মেয়েটা।’
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেঝেতে ভর্তি হয়ে থাকা রোগী আইরিন বেগম বলেন, ‘গতকাল হঠাৎ আমার বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি, বেড না থাকায় মেঝেতে বেড তৈরি করে চিকিৎসা নিচ্ছি।’
আরেক রোগী বলেন, ‘তীব্র গরমে ভুট্টা শুকানোর কাজ করেছি। হঠাৎ গতকাল থেকে আমার পেটব্যথা ও পাতলা পায়খানা। এরপর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে স্যালাইন ও চিকিৎসা নিয়েছি।’
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া এক শিশুর অভিভাবক বলেন, ‘দুই-তিন দিন আগে আমার বাচ্চার শ্বাসকষ্ট সমস্যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।’
রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সামাদ চৌধুরী বলেন, ‘৫০ শয্যার ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন শতাধিক রোগী। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেডের তুলনায় রোগী বেশি ভর্তি থাকলেও সাধ্যমত চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তীব্র গরমে হাসপাতালে বেশ কিছুদিন থেকে ডায়রিয়া রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। গরমের কারণে মা, শিশু ও বৃদ্ধরা ডায়রিয়া রোগে ভুগছে বলে মনে করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেসব সমস্যা রয়েছে, সব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া আছে, বরাদ্দ এলেই সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :