ঢাকা সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫

ঠাকুরগাঁওয়ে দুই সপ্তাহে মৃত্যু ৫, হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম সংকট

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৯:৪৩ এএম
ঠাকুরগাঁও হাসপাতাল। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তবর্তী কদমতলা গ্রামে সাপে কেটে মারা গেছে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সাকিবুল ইসলাম খোকা। বিষধর সাপের কামড়ের পর চিকিৎসার জন্য একে একে চারটি হাসপাতালে ঘুরেও অ্যান্টিভেনম না পেয়ে পথেই মৃত্যু হয় শিশুটির।

শনিবার (৯ আগস্ট) বিকেলে সাকিবুলকে নিজ গ্রামে দাফন করা হয়।

সাকিবুলের বাবা ইসরাইল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে প্রথমে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখান থেকে হরিপুর, ঠাকুরগাঁও সদর ও দিনাজপুরের বীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যান, কিন্তু কোথাও অ্যান্টিভেনম মজুত ছিল না। শেষ পর্যন্ত দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথেই ছেলের মৃত্যু হয়।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাকিবুলের বাবা বলেন, ‘চারটি হাসপাতালে ঘুরেছি, কোথাও ভ্যাকসিন (অ্যান্টিভেনম) পাওয়া যায়নি। আমার ছেলে আমার কোলে মারা গেছে। আমি চাই, আর কোনো বাবা যেন এই কষ্ট না পায়। সরকার যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।’

সাকিবুলই শুধু নয়, গত দুই সপ্তাহে ঠাকুরগাঁও জেলায় সাপের কামড়ে আরও অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছেন- পীরগঞ্জের স্কুলছাত্র তারেক, রানীশংকৈলের কলেজছাত্র মোকসেদ আলী এবং হরিপুরের গৃহবধূ সম্পা রানী।

সম্পা রানীর স্বামী জিতেন বলেন, ‘সকালে সাপে কামড় দেওয়ার পর হরিপুর, রানীশংকৈল, ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে গিয়েছি। কোথাও ভ্যাকসিন পাইনি। শেষে এক ওঝার কাছে নিয়েছি, তাতেও কোনো কাজ হয়নি। এখন দেড় বছরের সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি।’

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আজমুল হক বলেন, ‘বর্ষার সময় ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিবছর গড়ে ১০-১৫ জন সাপে কেটে মারা যান।’

তার মতে, বর্ষা শুরুর আগেই প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুত রাখা জরুরি।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাকিলা আক্তার বলেন, ‘আমাদের হাতে মাত্র ৫টি ভায়াল অ্যান্টিভেনম আছে, অথচ একজন রোগীর জন্য কমপক্ষে ১০টি ভায়ালের প্রয়োজন হয়। বিষয়টি সিভিল সার্জন মহোদয়কে জানানো হয়েছে।’

ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. মো. আনিছুর রহমান জানান, ‘অ্যান্টিভেনমের চাহিদা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু এখনো মজুত পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকেও সংকট রয়েছে। দ্রুত সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।’

তবে জেলা হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ বছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে কেন্দ্রীয়ভাবে অ্যান্টিভেনম সরবরাহ করা হবে না। প্রতিটি হাসপাতালকে নিজস্ব বাজেট থেকে সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে ওষুধ সংগ্রহের জন্য যে টেন্ডার করা হয়, তা জুলাই মাসে সম্পন্ন হলেও সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা পাওয়া গেছে আগস্টে। ফলে অ্যান্টিভেনম মজুতে দীর্ঘ বিলম্ব হচ্ছে।

ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, ‘আগামী টেন্ডার না হওয়া পর্যন্ত অ্যান্টিভেনম সংগ্রহের কোনো সুযোগ নেই। সাপের দংশনে মৃত্যু এখন অনেকটা নিশ্চিত হয়ে পড়ছে।’