ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় মাছের খাদ্য হিসেবে মুরগির বিষ্ঠার (পায়খানা) ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও কেউ তা মানছে না। দিন দিন অস্বাস্থ্যকর এ বিষাক্ত পদার্থের ব্যবহার বাড়ায় পুরো উপজেলাবাসীর জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রায় অর্ধেক পুকুরে সরাসরি মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন স্থানে মুরগির বিষ্ঠা ফেলে রাখায় প্রচুর দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও দুর্গন্ধ সহ্য করে স্কুলে যাচ্ছে। তবুও প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন।
রাণীশংকৈল উপজেলার প্রায় ৩ হাজারের বেশি পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা সড়েজমিনে ঘুরে জানা গেছে, এসব পুকুরের অন্তত ৫০ ভাগে সরাসরি মুরগির বিষ্ঠা (লিটার) মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অধিকাংশ খামার পদ্ধতি অবলম্বন না করে সরাসরি বিষ্ঠা পুকুরে ফেলে দিচ্ছে।
উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম. আর. বকুল মজুমদার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘পরোক্ষভাবে আমাদের মুরগির বিষ্ঠা খাওয়ানো হচ্ছে। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করা হবে।’
শুধু তিনি নন, এ নিয়ে আরও অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়েছেন।
সরজমিনে দেখা যায়, নেকমরদ-কাতিহার মহাসড়ক, নেকমরদ-চেকপোস্ট সড়ক, মীরডাঙ্গী-গজিরহাট ও চামারদিঘি সড়কসহ গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ পুকুরে ব্যবহার হচ্ছে খামারের মুরগির বিষ্ঠা ও তৎসংশ্লিষ্ট বর্জ্য পদার্থ।
স্থানীয়রা জানান, রাস্তার পাশে বিষ্ঠা ফেলা ও দুর্গন্ধের কারণে পথচারীরা মারাত্মক অসুবিধার মুখোমুখি হচ্ছেন। স্কুলপড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরাও অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। এ ধরনের সমস্যা সম্প্রতি নয়, নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে পড়েছে বলেও জানান স্থানীয়রা।
তারা আরও জানান, কিছু মৎস্যচাষী প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা ভয়ে কিছুই বলতে পারছেন না। যারা প্রতিবাদ করেছেন তাদের হুমকি-ধামকির শিকার হতে হয়েছে। পানি দুর্গন্ধপূর্ণ ও ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ছে। প্রশাসন এ বিষয়েও নীরব ভূমিকা রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী, মুরগির বিষ্ঠা প্রক্রিয়া করে চার মাস মাটিতে পুঁতে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করলে ১০০ কেজি বিষ্ঠা থেকে প্রায় ৫০ কেজি পুষ্টিগুণসম্পন্ন সার পাওয়া সম্ভব, যা পুকুরে ব্যবহার করা যেতে পারে।
স্বাস্থ্য বিভাগের জানানো মতে, মুরগির খাবারে থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ও কেমিক্যাল মাছের শরীরে প্রবেশ করলে তা ধ্বংস হয় না। মানবদেহে প্রবেশ করলে ক্যান্সারসহ নানা রোগের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই সরকার মুরগির বিষ্ঠা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল জলিল বলেন, ‘মৎস্যচাষিদের সচেতন করার জন্য বিভিন্ন সেমিনার ও উঠান বৈঠক করেছি। ইউএনও’কে বিষয়টি জানিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’