বৃহস্পতিবার, ০৮ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এসএ সোনিয়া

প্রকাশিত: মে ২২, ২০২৪, ১০:২০ পিএম

জামের পুষ্টিগুণ ও সাবধানতা

এসএ সোনিয়া

প্রকাশিত: মে ২২, ২০২৪, ১০:২০ পিএম

জামের পুষ্টিগুণ ও সাবধানতা

ছবি সংগৃহীত

সময়ের আগেই বাজারে টসটসে জামের দেখা মিলছে। জাম নানা দেশে নানা নামে পরিচিত, যেমন জাম্বুল, জাম্ভুল, জাভা প্লাম, জামুন, কালোজাম জাম্বোলান ইত্যাদি।

জাম ফল দেখতে ১ থেকে ২.৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। গাছ ১৪ থেকে ৬০ ফুট বা এর বেশিও লম্বা হতে পারে। পাতা সরল, বড়, চামড়া পুরু এবং চকচকে। গাছ চিরসবুজ। চকচকে পাতা এবং চিরসবুজ হবার কারণে এর অলংকারিক মান বেশ ভালো।

মে জুন মাসে ফল বড় হয়। ফলটি লম্বাটে ডিম্বাকার। শুরুতে এটি সবুজ থাকে যা পরে গোলাপী হয় এবং পাকলে কালো বা কালচে বেগুনি হয়ে যায়। এটি খেলে জিহ্বা বেগুনি হয়ে যায়।

জাম ভারতবর্ষ থেকে সারা দুনিয়াতে ছড়িয়েছে। বাংলাদেশে প্রধানত দুই জাতের জাম পাওয়া জায়। জাতগুলি হলো ক্ষুদি- খুব ছোট জাত এবং মহিষে- বেশ বড় ও মিষ্টি। এটি বর্ষাকালে পাওয়া যায়। ফলের গা কালো এবং খুব মসৃণ পাতলা আবরণ দিয়ে ঢাকা। ফলের বহিরাবরণের ঠিক নিচ থেকেই গাঢ় গোলাপী রংয়ের টক মিষ্টি শাস।

পুষ্টিমান ও রাসায়নিক উপাদান

জাম একটি পুষ্টিকর ফল যা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদানগুলি জামে থাকতে পারে:

• ক্যালসিয়াম: শক্তিশালী অস্থি ও দাঁতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

• ফসফরাস: এনার্জি সরবরাহ করে এবং পুরুষ বীর্যত্ব বৃদ্ধি করে।

• গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ: শরীরের শক্তির জন্য প্রাথমিক উৎস।

• ভিটামিন সি: মজাদার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের পুষ্টি বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকর ক্রিয়াকলাপ সমর্থন করে।

• ভিটামিন এ: শারীরিক ও মস্তিষ্কিক বৃদ্ধি সমর্থন করে।

• ফাইবার: পেটের সংযম বজায় রাখে এবং পচনশক্তি বৃদ্ধি করে।

জাম এই পুষ্টি উপাদানগুলির মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাদ্য হিসাবে পরিচিত।

জামের পুষ্টিগুণের তালিকা (প্রতি ১০০ গ্রাম)

ক্যালোরি : 62 কিলোক্যালোরি 3%

মোট চর্বি : 0.1 গ্রাম 0%

সোডিয়াম : 28 মিলিগ্রাম 1%

পটাসিয়াম : 55 মিলিগ্রাম 1%

মোট কার্বোহাইড্রেট : 14 গ্রাম 5%

ডায়েটারি ফাইবার  :0.6 গ্রাম 2%

চিনি : 8.5 গ্রাম 9%

প্রোটিন : 0.7 গ্রাম 1%

ভিটামিন সি : 14 মিলিগ্রাম 15%

ভিটামিন : A 9 মাইক্রোগ্রাম 1%

ক্যালসিয়াম : 19 মিলিগ্রাম 2%

আয়রন : 0.24 মিলিগ্রাম 1%

দৈনিক চাহিদা মূল্য (DV) ২,০০০ ক্যালোরি মানের একটি খাদ্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়েছে।

ব্যবহার

জামের প্রধান ব্যবহার খাদ্য হিসেবে। টক মিষ্টি সুস্বাদু এই ফলটি বেশ জনপ্রিয়। কবিরাজী বা হেকিমী চিকিৎসায় এর কিছু ব্যবহার আছে।

বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ, ভারতবর্ষ, ইন্দোনেশিয়া এবং চীন-এ জামের ব্যবহার হয়ে আসছে। জামের বীজ দিয়ে নানান রোগের আয়ুর্বেদী চিকিৎসা করা হয়, যেমন বহুমুত্র। ইউনানী এবং চৈনিক চিকিৎসাতেও এর ব্যবহার আছে। হজমের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, মাড়ির প্রদাহ ইত্যাদি রোগে জামের বীজ, ছাল ও পাতা ব্যবহৃত হয়। জাম থেকে মদ ও সিরকা তৈরি করা যায়। জামে বেশি পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি আছে।

পরিণত জাম গাছের গুঁড়ি থেকে যে কাঠ পাওয়া যায় তা দিয়ে দরজা জানালার ফ্রেম আসবাবপত্র তৈরি করা যায়।

জামের উপকারিতা

জাম ফল একটি মধুর রসপূর্ণ ফল। এটি আমাদের বাঙালি জীবনে নানাভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি খুবই স্বাদযুক্ত এবং সমৃদ্ধ আমিষের সাথে সংমিশ্রিত হয়ে থাকে।

 

জামে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। আর আয়রন থাকার ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বেড়ে যায়। ফলে রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্য জাম খুবই ভালো।

জামে ভিটামিন 'এ' আর 'সি' আছে। এছাড়াও এতে থাকে বিভিন্ন মিনারেল, যা আমাদের চোখ এবং ত্বকের জন্য খুব উপকারী।

জাম খেলে পেট ঠান্ডা হয়, ফলে দ্রুত হজম হয়ে যায়। যাদের অম্বলের সমস্যা আছে, তারা বেশি করে জাম খেলে উপকার পাবেন।

অ্যাসট্রিনজেন্ট প্রপার্টি থাকার ফলে জাম ত্বক অয়েল ফ্রি রাখে। এছাড়াও অ্যাকনে আর কালো ছোপ দূর হয়।

জামে উপস্থিত অক্সিলিক অ্যাসিড‚ গ্যালিক অ্যাসিড‚ ম্যালিক অ্যাসিড‚ ট্যানিন‚ বেটুলিক অ্যাসিড ইনফেকশন দূরে রাখে। এছাড়াও জাম অ্যান্টি ম্যালেরিয়াল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়ালও।

আগেই বলেছি এতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টি আছে‚ এর সাহায্যে দাঁত এবং মাড়ি ভালো থাকে।

এছাড়াও মুখের দুর্গন্ধ দূরে রাখতেও সাহায্য করে।

 

জামে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি থাকে। ফলে শরীর ইমিউনিটি বাড়িয়ে দেয়। শরীরকে কমন সিজনাল ডিজিজ এর হাত থেকে রক্ষা করে। জামের মধ্যে উপস্থিত পটাসিয়াম হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে উচ্চ রক্ত চাপ কমিয়ে কার্ডিও ভাসকুলার ডিজিজ দূরে রাখে।

 

যাদের ডায়বেটিস হয়েছে তাদের জন্য জাম খুব ভালো। এতে অ্যান্টি ডায়েবেটিক প্রপার্টি আছে যা রক্তে চিনির মাত্রা কমায়।

এই ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ার ফলে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। এছাড়াও অতিরিক্ত তেষ্টা পাওয়া বা বারবার মূত্রত্যাগ যা ডায়বেটিসের লক্ষণগুলোও নিয়ন্ত্রণে রাখে। শুধু ফল নয়‚ এই গাছের পাতা‚ ডাল‚ ফলের বিচি সব কিছু দিয়েই ডায়েবেটিসের ট্রিটমেন্ট করা হয়।

 

জাম খাওয়ার আগে যা জানা জরুরী :

জাম খাওয়ার সময় কিংবা পরে বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে, যা না মানলে শারীরিক নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। যেমন: কখনোই খালি পেটে জাম খাবেন না। এভাবে জাম খাওয়ার কারণে আপনার পেটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন: গ্যাস্ট্রিক, বদহজম, অম্বল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পুষ্টিবিদদের মতে, জাম ও হলুদ খুবই মারাত্মক জুড়ি। তাই এই দুটো জিনিস কখনো একসঙ্গে খাবেন না। জাম খাওয়ার পর হলুদ দিয়ে তৈরি কোনো খাবারও না খেয়ে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করুন। জাম খাওয়ার আগে পানি পান করতে চেষ্টা করুন। জামের পুষ্টিগুণ অটুট রাখতে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জাম খাওয়ার পর কখনোই পানি পান করবেন না। পানি পান করতে অন্তত আধঘণ্টা অপেক্ষা করুন।

চিকিৎসকরা বলছেন, জাম খাওয়ার পর দুধ, পনির, দইয়ের মতো দুগ্ধজাত খাবার শরীরের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই জাম খাওয়ার পর কখনোই এসব খাবার খাবেন না।

Link copied!