ঢাকা বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫

আমার সাংবাদিকতার আতুড়ঘর ‘রূপালী বাংলাদেশ’

জুবায়ের দুখু
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৫, ০৯:৪২ এএম
জুবায়ের দুখু। ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

এইতো সেদিন খেয়ে উঠে মা’র আঁচল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে কইলাম দেখিস একদিন বিশাল সাংবাদিক হইবো এই দ্যাশে। প্রথমে মা’য় এইসব কথা বোঝে নাই। বাঙালি নারীর মতো একগাল হেসে কইলো হইস, তোর যা ভালো হয়— মন চায়, তাই-ই হবি। সেই থেইক্কা মনের ভেতর একটা লুপ্ত বাসনা জাগিয়ে তুললাম। আমারও হওয়া লাগবি একজন সাংবাদিক। না শুধু সাংবাদিক নয়— সু-দক্ষ, পরিপক্ব একজন সাংবাদিক।

যে কওয়া তো শুরু হইলো সেই কাজ। সেইসব শৈশবজারিত দিনগুলো বুকে নিয়ে আইলাম ঢাকার শহুরে। গাঁয়ে থাকে মা, ছোট ঘর। আগে তালপাতার ছিল শুনছি, এহন হইছে পাকাবাধা ঘর— ইট আর সিমেন্টে। এহন আমাদের মনে হইছে নানারকম বাসনা। আমার যেমন সাংবাদিক, আরদেরও হয়তো হইছে বড় বড় কোনো বাসনা। ঢাকায় আইস্যা পড়লাম ভ্যাজালে— একটা বইয়ের দোকানে, বই বিক্রি করতে করতে, আর বই পড়তে পড়তে মনে আরও আরও বিষয়াদি উঁকি দিল। তারপর একদিন এইচএসসির রেজাল্ট নিয়া ভর্তি হইলাম একটা ভার্সিটিতে— তহনো ওই বইয়ে দোকানে কাজ করি, আর করি ভার্সিটির পড়াশোনা। খুব বেশি দিনের গল্প নয়। ২০২৩ সালের মধ্য সময়ে মানারাতে সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হইলাম। আর সাংবাদিক হওয়ার সেইসব মনোবাসনাকে পুরোনের জন্য উদ্বিগ্ন হইয়ে উঠলাম। পৃথিবীতে সাংবাদিক হওয়ার আগে থেইক্কা আমি কবিতা লিখি, বাংলা কবিতা। মায়ের জন্য একটা কবিতা লিইখ্যা একবার পয়সা পাইলাম। হেই আনন্দ ছিল আকাশচুম্বী। মানারাতে পড়তে শুরু করেছি সবে— বন্ধুরা এদিক সেদিক চাকরি শুরু করছে। কেউ ভালো হাউজে কেউ একটু নরমাল— তবু ওরা চাকরি করে। দেখলাম ওরা কেউ কেউ গলায় কার্ড নিয়া ঘুরতেছে চোক্ষের সামনে— দেখলাম কার্ডে প্রেস লেখা। হিংসা হইলো। হিংসাত্মক হওয়া যদিও মানুষ হিসেবে খুবই অপকার, তবু আমার হিংসাই হইলো। কারণ হইলো সেই ছোট থেইক্কা সাংবাদিকতায় এই জীবন ধরবার ইচ্ছা ছিল।

তহন আমার ঢাকার উঠতি বয়স, যেহানে যেদিকেই চোক্ষে দেখি— মনে হয় ওইহানে গিয়া খানিকটা সময় বসি থাকি, গান গাই আর শহুরে কোলাহল মাখি। এরই মধ্যি দিয়ে বয়ে গেল অনেক ঝামেলা— হয়তো ছোট ঝড়। অনেক হতাশা আর ফেরাফিরির মধ্যি দিয়া— চোক্ষে কিছুটা জলের আভায় আমার সাংবাদিকতা জীবন শুরু হইলো দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ দিয়াই। এর-ও আগে, মানে যহন চাকরি পাই নাই— রূপালী বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক জানাশোনা হইয়া গ্যাছে বন্ধু সুশান্তের কাছ থেইক্কা। সুশান্ত যহন অনেক টাকা বেতনে চাকরি শুরু করছিল, তহন আমি বেতন পাই না, প্রায় মাংনা দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রুফ দ্যাখার কাজ করছিলাম মাস কয়েক। সেইসব সময় ছিল ‘আমার ঢাকা যাপন’। সেইসব সময়ে রমনার গেট, শাহবাগ, আর তেজকুনি পাড়ায় আড্ডা দিতাম চেনাপরিচিতদের সঙ্গে।

এহুন এই নভেম্বরে রূপালী বাংলাদেশ এক বছরে পৌঁছাইলো। যদিও পত্রিকার শুরুর দিক থেইক্কা আমি তাগো সঙ্গে ছিলাম না। তবে খাটি সত্য কথা হইলো এই সাংবাদিকতা জীবন শুরু রূপালীর হাত ধইরা। যহন চাকরি নিলাম তহন থেকে এহন পর্যন্ত রূপালীরে ভালোবাসি। এই ভালোবাসা কিন্তু মুখের কওন না, অন্তরে এবং কাজের মধ্যি দিয়া তা প্রমাণের চেষ্টা চালাইছি, করতেছি। সাংবাদিকতা শুরু পর থেইক্কা এই দেশ সেই দেশ যুদ্ধ লাইগ্যা আছে। আমার শুরু দিকে বিদেশি যুদ্ধ কালচারাল নিয়া কাজ করার অভিজ্ঞতা হইসে রূপালীর সঙ্গে— পরে অবশ্য বিষয়াদি আরও খাতির ও অফিসের প্রয়োজনে এ ডেক্স থেকে ও ডেক্সে দৌড়াইতে হইসে।

সাংবাদিকতা শুরু রূপালী দিয়ে, এই গল্পডা অনেক জায়গায় বলি। যহন শুরু করি সহকর্মী পাই আজম, কাদের, শাওন, যোবায়ের, সাদিকুল, তারপর ফয়সাল ভাই, সুমন ভাই, ডিজিটাল, অনলাইন মিলা অনেকেই আমার নয়া সহকর্মী ছিল। অনলাইন থেইক্কা কয়েকজন মিলা ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধের নিউজ দিয়ে বেশ ভালো কাজ করেছিলাম, যা একটা প্রাপ্তি কওয়াই যায়। যদি ভুল না কই, তবে কইবো আমরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইরান-ইসরায়েল, ভারত-পাকিস্তান এইসব সংঘাত নিয়মিত ও নির্ভুল আপডেট এবং পাঠকের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি এবং পাঠকের রেসপন্স পাইছি।

সাংবাদিকতা জীবনে এথিকসে বিশ্বাসী। এই দুই চোক্ষে অফলাইন-অনলাইন, ডিজিটাল টিম— মানে হইলো গিয়া সত্য মানে সত্য, মিথ্যা মানে মিথ্যা- এইসব সংস্কৃতি আমি কিছু সিনিয়র সহকর্মীর কাছ থেইক্কা পাইছি। তারা শিক্ষক সমতুল্য। তাগোরে সহযোগী হতে পেরে নিজেরেও সুন্দরভাবে দেখতে ইচ্ছা হইতো, হইতেছে। যদিও সাংবাদিকতা নিয়া পড়াশোনা করি। তবে পড়াশোনাই’তো কাজকে দক্ষ কইরা তোলে না। আমি শতভাগ কইতে চাই রূপালী বাংলাদেশ আমার সাংবাদিকতার আতুড়ঘর।

পূর্বের দিনগুলো থেইক্কা একটু কই- তহন শুরুর পর্ব, না বুঝতাম কাজ, না বুঝতাম সাজ। কত লক্কর-ঝক্ষর, মান-অভিমান উতরাইয়া- ভাই সমতুল্য, শিক্ষক সমতুল্য লোকদের সঙ্গে বেড়ে উঠতেছি এহনো রূপালোতেই। আরও একটা কথা- আমাগোরে সম্পাদক সায়েম ভাই আসেন আমরা সালাম দেই কথা কই। স্বরূপ করিম ভাই আসে সালাম দেই কথা কই। মানে হইলো গিয়া, রূপালীর পরিবেশ নিয়াও একটা সালাম দেওয়া উচিত। সিনিয়র-জুনিয়র যেন ছোট ভাই, বড় ভাইয়ের মতন। আসলে সেই যে মা’র আঁচল দিয়া মুখ মুছতে মুছতে কইলাম একদিন সাংবাদিক হবো। সেই কওয়ার যাত্রা রূপালী বাংলাদেশ দিয়া। তারা আমারে সুযোগ দিছে- নতুন হিসেবে বহু ভুলভাল কইরা ফেলাইছি, এহনো করি। কিন্তু এরা আমার ভুলগুলোরে ধরাইয়া দিছে- শিখাইতেছে। এইডা একটা প্রাপ্তি কওয়াই যায়- রূপালী বাংলাদেশরে নিয়া।

যেহেতু এহনো রূপালী বাংলাদেশেই কর্মরত, চাইবো সামনের দিনগুলো যেন আরও পরিবর্তন আরও ভালো কর্মের মধ্যি দিয়া নিজেরে তুলে ধরতি পারি। যেমন এই এক বছর বয়সে রূপালী বাংলাদেশ ও আমি অনেক উন্নতি ও পরিবর্তন হইছি।

 
লেখক: নিউজরুম এডিটর দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ।