ঢাকা বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫

এল-ফাশেরে ৩ দিনে ২৭ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে আরএসএফ

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৫, ০৯:২৩ এএম
এল ফাশেরে আরএসএফের টহল। ছবি- সংগৃহীত

দারফুরের এল-ফাশের দখলের পর মাত্র তিন দিনে সেখানে ২৭ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে সুদানের আধামিলিশিয়া  আরএসএফ (র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস)। মিডল ইস্ট আই  কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ অভিযোগ করেছেন দারফুরের গভর্নর মিনি আরকো মিনাওয়ি।

এই সংখ্যা আগের সব মূল্যায়নের চেয়ে বহুগুণ বেশি। এর আগে সরকারি কর্মকর্তারা ও মানবিক সংস্থাগুলো জানিয়েছিল, এল-ফাশের পতনের পর অন্তত ২ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছে।

গত ২৬ অক্টোবর সুদানি সেনাবাহিনী (এসএএফ) শহর ছাড়ার পর আরএসএফ হঠাৎ হামলা চালায়। তার আগে শহরটি টানা ৫৫০ দিনের বেশি অবরুদ্ধ ছিল। শহর পতনের পর একের পর এক গণহত্যার বর্ণনা উঠে আসে। আশঙ্কার বিষয়, এত বড় হত্যাকাণ্ডের মধ্যেও খুব কম মানুষ শহর থেকে পালাতে পেরেছে।

প্রাণে বাঁচা মানুষজন মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছেন, সেখানে চলেছে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা ও নানান নির্যাতন। গত বুধবার দারফুর সফর শেষে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার এল-ফাশের পরিস্থিতিকে ‘সর্বোচ্চ ভয়াবহ’ এবং ‘একটি অপরাধস্থল’ বলে অভিহিত করেন।

পোর্ট সুদানে সাময়িক কার্যালয় থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মিনাওয়ি। খার্তুমে দুই বছর আগে লড়াই ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সুদানি সেনাপ্রধান ও সরকারের বেশির ভাগ অংশ সেখানেই অবস্থান করছেন।

উত্তর দারফুরের বাসিন্দা এবং আরএসএফের টার্গেটে থাকা জাঘাওয়া সম্প্রদায়ের সদস্য মিনাওয়ি তাঁর নিজের পরিবারের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত বলতে চাননি। শুধু বলেছেন, ‘আমার পরিবারের অনেকজনকেই শেষ করে দেওয়া হয়েছে।’

সতর্কতা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি

২০২৩ সালের এপ্রিলে সুদানের গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই আরএসএফকে গণহত্যা, নারী নির্যাতনসহ নানান যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। পশ্চিম দারফুরে মাসালিত জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগও রয়েছে।

কিন্তু এল-ফাশের নিয়ে সতর্কবার্তা সত্ত্বেও তা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষের এই শহর টানা দেড় বছর খাদ্য-ওষুধের অভাবে অবরুদ্ধ ছিল। শেষ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরবরাহ করা উন্নত অস্ত্র ব্যবহার করে আরএসএফ ২৬ অক্টোবর শহর দখল করে।

এল-ফাশের ছিল দারফুরে সুদানি সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্র ‘জয়েন্ট ফোর্স’-এর নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ বড় শহর। মিনাওয়ি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিস্ক্রিয়তার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বহুবার সতর্ক করেছি। বলেছি, দারফুর দখল হলে সেটা গণহত্যায় পরিণত হবে। কিন্তু আমাদের সতর্কতা উপেক্ষা করা হয়েছে।’

যুক্তরাজ্য ও আমিরাতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

সুদান প্রসঙ্গে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা পায়েমার শায়না লুইস বলেছেন, অঞ্চলটিতে গণহত্যা রোধে উদাসীনতা দেখিয়ে যুক্তরাজ্য ‘পরোক্ষভাবে দায়ী।’

এদিকে জাতিসংঘকে জানানো হয়েছে, সুদানে আরএসএফ বাহিনীর হাতে ব্রিটিশ সামরিক সরঞ্জাম দেখা গেছে, যা ইউএইর কাছে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র বিক্রির প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

মিনাওয়ি সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সরাসরি অভিযুক্ত করে বলেন, আরএসএফকে তারা ‘ড্রোনসহ অত্যাধুনিক অস্ত্র’ সরবরাহ করছে। আরএসএফের কাছে চীনে তৈরি উন্নত ড্রোন এবং অন্যান্য অস্ত্র ইউএই পাঠিয়েছে বলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টও আছে।

ইউএই অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। একই সঙ্গে তারা সুদান সংকট নিয়ে আলোচনাকারী ‘কোয়াড’ জোটের সদস্যও। সুদানি সেনাবাহিনী এটিকে ভণ্ডামি বলে উল্লেখ করেছে। কারণ, তাদের দৃষ্টিতে ইউএই নিজেই সংঘাতে পক্ষপাতী।

শান্তি আলোচনা শুরুর ঠিক আগে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও ইউএই এল-ফাশের পরিস্থিতি এড়িয়ে গেছে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।

মিনাওয়ি বলেন, ‘তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কূটনৈতিকভাবে বিভ্রান্ত করছে। আরএসএফকে সমর্থন না দেওয়ার দাবি শুধু মুখের কথা। তারা নিজেদের অপরাধ ঢাকছে।’

আলোচনা হলে আমিরাতের সঙ্গেই হবে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ ঘোষণা দেওয়ার ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে মিনাওয়ি শান্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেন। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ‘সুদানে যা ঘটছে তা তাৎক্ষণিকভাবে থামানোর উদ্যোগ নেবেন।’

মিনাওয়ি বলেন, ‘আলোচনা করতে হলে আমাদের হেমেদতি নয়, সরাসরি আমিরাতের সঙ্গেই কথা বলতে হবে।’ হেমেদতি অর্থাৎ আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগোলোকে তিনি ’ইউএই-এর পুতুল’ বলে অভিহিত করেন।