শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৪, ১০:৪৫ পিএম

দুর্নীতির বরপুত্র নাফিজ সরাফাত

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৪, ১০:৪৫ পিএম

দুর্নীতির বরপুত্র নাফিজ সরাফাত

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চৌধুরী নাফিজ সরাফাত পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান। সাবেক ‘ফারমার্স ব্যাংক’-এর দুর্দাশা ঘোচাতে নতুন ‘পদ্মা ব্যাংক’ নাম দিয়ে নাবিক হিসেবে তার দায়িত্ব নেন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন দুর্নীতির আরেক বরপুত্র সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। 

দুজনে মিলে শেয়ারবাজারে অবৈধ বিনিয়োগ ও বেনামি ঋণে ব্যাংক খাতের দুর্গতি আরও বাড়িয়ে তোলেন। দুজনে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের শেয়ার লিখে নেওয়া এবং বেস্ট হোল্ডিং লিমিটেড কোম্পানির বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন। যদিও পরে তা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা দুর্নীতির দায়ে ৬টি বিও হিসাব ফ্রিজ করে রেখেছে। 

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সাধারণ কর্মী হিসেবে চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের জীবনের শুরু হলেও তিনি এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে ৮০০ কোটি টাকা ভরেছেন নিজের পকেটে। ব্যাংকের বিভিন্ন আর্থিক চিত্রে অসঙ্গতি ও স্বেচ্ছাচারী আচরণে প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন তিনি। তবে ৮০০ কোটি টাকা লোপাটের সেসময় সরব না হলেও ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পটপরিবর্তনের পরেই দুর্নীতির তালিকায় সালমান এফ রহমাসসহ তারও নাম আসছে।

অল্প সময়ে এবং কিভাবে এতো সম্পদের মালিক হলেন, তাই খুঁজতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ৩ সদস্যের দল। দুদকের উপ-পরিচালক ইসমাইল হোসেনকে প্রধান করে উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ও উপ-সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম অনুসন্ধানে নামছেন।

সাবেক আইজিপি বেনজীরের সঙ্গে তার বিশেষ সখ্যতা। তার সহচর্যে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত সিনিয়র এক সাংবাদিকের বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের শেয়ার জোরপূর্বক লিখে নেওয়ায় পরই আলোচনার শীর্ষে চলে আসেন।

গত এক দশকে তিনি রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নাফিজ সরাফাত হোটেল ব্যবসা, বিদ্যুৎ, মোবাইলের টাওয়ার, মিডিয়াসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসার বিস্তার ঘটিয়েছেন। এসব খাত থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। একটি সূত্র বলছে, অবৈধভাবে টাকা কামালেও সেই টাকা দেশে রাখেনি। পাচার করেছেন কানাডায়। সেখানকার বেগমপাড়ায় তারও বসতি বা আলাদা সাম্রাজ্য রয়েছে। বিপদে কানাডার আশ্রয় নিতে পারেন সেজন্য বিকল্প ব্যবস্থা করেন বলে জানান তার ঘনিষ্ঠজনরা।

শিল্পদ্যোক্তা ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত
ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত একজন শিল্পদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার। তিনি দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা, লা মেরিডিয়ান ঢাকা, শেরাটন ঢাকা ও ম্যারিয়টসহ একাধিক চেইন হোটেলের পৃষ্ঠপোষক। দেশের শীর্ষ রাষ্ট্রায়ত্ত চা বাগান ন্যাশনাল টি লিমিটেডের পরিচালক।

চতুর্থ প্রজন্মের বাণিজ্যিক পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ আর-এলএনজিভিত্তিক ৬০০ মেগাওয়াটের পাওয়ার প্লান্ট ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের (যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিকের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বে গড়া) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সর্ববৃহৎ বেসরকারি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট রেইস ম্যানেজমেন্ট পিসিএলের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এবং আন্তর্জাতিক বিমা প্রতিষ্ঠান এলআইসি বাংলাদেশের পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান।

বর্তমানে তিনি অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এপিইউবি) বোর্ড সদস্য, দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুুু্যুয়াল ফান্ডস অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার হাউজের (কানাডা) সভাপতি, নিউজ বাংলা টোয়েন্টি ফোর ডট কম-এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি।

এ ছাড়াও তিনি কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব ও আর্মি গলফ ক্লাবের সদস্য, ওয়ার্ল্ড চেজ ফেডারেশনের (বাংলাদেশ বিভাগ) সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্সের (সদস্য) সঙ্গে জড়িত, বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য, ইনফরমেশন সিস্টেমস অডিট অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের (ইউএসএ) সদস্য।

২০০৯ সালে আওয়ামী সরকারে উত্থান 
২০০৯ সালে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। সরকারের ছত্রছায়ার প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই ১০ বছরে হাতিয়ে নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। এরপরেই শেয়ারবাজার ও ব্যাংক দখলে নিয়ে টাকা লুণ্ঠন করতে থাকেন। তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সঙ্গে।

তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে পুলিশের প্রটোকলে সিনিয়র সাংবাদিক শফিকুর রহমানের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের শেয়ার লিখে দেন দুজন।

দেশের শীর্ষ একটি হোটেলে বেনজীর আহমেদের পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে শেয়ার লিখে নেওয়ার অভিযোগ করেন আওয়ামী সরকারের এমপি ও সাংবাদিক শফিকুর রহমান। যদিও এ বিষয়ে পরে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত তার সংবাদপত্রে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সম্মানহানিকর ও ভুল’ মন্তব্য বলে প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন তিনি।

পুঁজিবাজারে অবৈধ কর্মকাণ্ড
ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্সের প্রধান উদ্যোক্তা। দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি রেস প্রাইভেট লিমিটেডের অন্যতম কর্ণধার। এ কোম্পানি ১০টি মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড পরিচালনা করছে, যার তহবিলের আকার প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

প্রসপেক্টাস ও আইন অনুসারে, ফান্ডগুলোর সর্বোচ্চ মেয়াদ ১০ বছর কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ায় পরেও এগুলোর অবসায়ন হয়নি। প্রভাব খাটিয়ে মেয়াদ আরও ১০ বছর বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে বিধিবহির্ভূতভাবে বিএসইসির অনুমোদন না নিয়ে এসব ফান্ডের টাকায় চৌধুরী নাফিজ সরাফাত আলোচিত পদ্মা ব্যাংকের শেয়ার কিনে পরিচালক বনে যান। এছাড়া মাল্টি সিকিউরিটিজ নামে একটি ব্রোকার হাউজও কেনা হয়েছে এসব ফান্ডের টাকায়।

ঋণ কেলেঙ্কারিতে ফারমার্স ব্যাংক বন্ধ
অনিয়ম আর ঋণ কেলেঙ্কারিতে ফারমার্স ব্যাংক বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ঘটে ২০১৭ সালে। সে সময় চাপের মুখে চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর। পরের বছর ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তনের পর ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ফারমার্স ব্যাংকের নাম হয় পদ্মা ব্যাংক।

পদ্মা ব্যাংককে উদ্ধার করতে সরকারের উদ্যোগে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন জোগান দেওয়া হয়, যা ওই সময়ে ব্যাংকটির মোট মূলধনের ৬৬ শতাংশ।

বেনামি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিজ উদ্যোগে ঋণদান ও অস্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদনের কারণে আলোচনায় আসেন তিনি। এ সময়ে ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ায় আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছিল না পদ্মা ব্যাংক। এমতাবস্থায় ২০২০ সালে কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব দেয় তারা। আরেকটি প্রস্তাবে যোগান দেওয়া মূলধনের বিপরীতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমপরিমাণ ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার শেয়ার ইস্যু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা যেভাবে
ফারমার্স ব্যাংকের শুরুই অনিয়মের মধ্যদিয়ে। কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন পাওয়ার আগেই সাইনবোর্ড বসিয়ে লোকবল নিয়োগ দেওয়া শুরু করে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সঙ্গে নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন মাহবুবুল হক চিশতী। ব্যাংকটি কার্যক্রম শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই ঋণ বিতরণে অনিয়মের নানা তথ্য আলোচনায় আসতে শুরু করে। ফলে আমানতকারীরা টাকা তোলা শুরু করেন, চাপে পড়ে ব্যাংকটি। নগদ অর্থের চরম সংকটে পড়লে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।

এ পরিস্থিতিতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে ব্যাংক ছাড়তে বাধ্য হন মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও মাহবুবুল হক চিশতী। ব্যাংকটির এমডি একেএম শামীমকেও অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে আসে, ঋণ গ্রাহকের টাকা জমা হয়েছিল চেয়ারম্যান ও নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যানের ব্যাংক হিসাবে। এখন জেলে আছেন মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী এবং তার ছেলে রাশেদুল হক চিশতী। গত বছরের অক্টোবরে ১৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় তাদের ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়।

কমাতে গিয়ে পদ্মা ব্যাংকের ঋণ আরও বাড়ল
পদ্মা ব্যাংকের আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, বিদায়ী ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলোর আমানত ২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণই ছিল ৩ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৬২ শতাংশই ছিল খেলাপি।

ব্যাংকটির ঋণ থেকে যে আয় হচ্ছে, তা দিয়ে আমানতের সুদ পরিশোধ করা হচ্ছে না। ফলে প্রতিবছর বড় অঙ্কের লোকসান গুনছে পদ্মা। পাশাপাশি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পারায় গ্রাহকের আস্থা তলানিতে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি খাত থেকে পাওয়া ২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা আমানতকে শেয়ারে রূপান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে সফল হয়নি ব্যাংকটি।

অবশেষে পদ্মা ব্যাংকের দুর্দশা নিয়ে আলোচনার মধ্যে চলতি বছর ৩১ জানুয়ারি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন নাফিজ সরাফাত। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় গত মার্চে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চুক্তি করে পদ্মা ব্যাংকের পর্ষদ।

শেয়ারবাজার থেকে অর্থলোপাট
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক পরিচালক জানান, তার (নাফিজ সরাফাত) বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার থেকে অর্থলোপাট ও ফারমার্স ব্যাংক দখলের অভিযোগ রয়েছে। মাস খানেক আগে এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে তার বিরুদ্ধে ৮০০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে। ক্ষমতার দাপটে তার বিরুদ্ধে এতদিন ব্যবস্থা না নেওয়া গেলেও। এবার নড়েচড়ে বসেছে দুদক।

অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানে অডিট রিপোর্ট এবং নথিপত্র তলব করে চার দফায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই অনুসন্ধানে গতি আসবে, বলে জানান তিনি।

কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিতে হেলিকপ্টার নিয়ে ভিডিও ভাইরাল
২০২১ সালে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোরের আঁকা একটি কার্টুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তোলে। চৌধুরী নাফিজ সরাফাতকে চিত্রায়িত করা ওই কার্টুনে নাভির জায়গায় দেখা যায় ব্যাংকের প্রতীক সিন্দুকের হাতল। তাতে ক্যাপশন ছিল, আমি চৌ নাফিজ সরাফাত/জানি ব্যাংক খাওয়ার ধারাপাত!

সে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আলোচনায় বলা হয়, কিশোরের আঁকা ওই কার্টুনের উপরের ক্যাপশনটি লিখেছিলেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মুশতাক আহমেদ। ওই বছর মে মাসে সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে মুশতাক, কিশোরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বার বার জামিন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগারে মৃত্যু হয় ৫৩ বছর বয়সী মুশতাকের। আর কিশোর জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তার ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণের জন্য বাড্ডার কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিতে প্রথমে আশ্রয় দেন পুলিশকে। র‌্যাবের একটি হ্যালিকপ্টারে করে ১৯ জুলাই বিকেলে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাদ থেকে ৬২ পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধারের একটি ভিডিও ভাইরাল হয় নেট দুনিয়ায়।  

একটি সূত্র জানায়, পুলিশ চলে যাওয়ার পর সেই ভবন থেকে অপারেশনে অংশ নেয় ভারতীয় ‘র’ কিংবা সেদেশীয় প্রসাশনের কর্তারা। তারা স্নাইপার ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছুড়েছে। পরদিন সেই ছাদ থেকে ধূতিপরা বেশকিছু ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে দেখা যায় বিশেষায়িত একটি বাহিনীর হেলিকপ্টারে। এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয় নেট দুনিয়ায়। কাদের উদ্ধার করেছে হেলিকপ্টারটি, এমন প্রশ্ন এখন সচেতন মহলে। স্থানীয়রা জানিয়েছে যারা গুলি করেছে তারা হিন্দি ভাষায় কথা বলত।

দুর্নীতিতে সালমান এফ রহমানসহ নাফিজ
সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপের চার প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আওতায় থাকা ডলার থেকে ২৫.৪৩ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে এখনও ফেরত দেয়নি। শুধু তাই নয়, দেশের সরকারি ও বেসরকারি সাতটি ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এসব ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে মানা হয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো আইন। পর্যাপ্ত জামানতও নেই অধিকাংশ ঋণে। তার মতো চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বেনামে ঋণ নিয়েছেন। তা এখনো পরিশোধ করছে না। 

সালমান এফ রহমান সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্প্রিংফুল অ্যাপারেলসের কাছে ১২.২৫ মিলিয়ন ডলার, পিঙ্ক মেকার গার্মেন্টসের কাছে ৮.৫৩ মিলিয়ন ডলার, অটাম লুপ অ্যাপারেলসের কাছে ৪.৩৬ মিলিয়ন ডলার ও প্লাটিনাম গার্মেন্টসের কাছে ০.২৮ মিলিয়ন ডলার ইডিএফ ঋণের বকেয়া টাকা পাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বেক্সিমকো গ্রুপের কাছ থেকে এসব ডলারের ঋণ ফেরত না আনতে পারার কারণে ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ঋণ ইস্যুকারী হিসেবে জনতা ব্যাংকের অনুকূলে ইডিএফ ঋণ সুবিধা দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।

তেমনি চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বেনামি বিভিন্ন ঋণ পরিশোধ করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!