পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নে আরেকটি বড় সাফল্য অর্জন করল বাংলাদেশ। গাজীপুরের কাশিমপুরে অবস্থিত তাসনিয়া ফেব্রিকস লিমিটেডের প্রশাসনিক ভবন পেয়েছে বিশ্বসেরা পরিবেশবান্ধব তৈরি পোশাক কারখানার স্বীকৃতি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (USGBC) থেকে এই ভবনটি ১০৭ নম্বর পেয়ে ‘লিড প্লাটিনাম’ সনদ অর্জন করেছে, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্কোর হিসেবে বিবেচিত।
শুধু প্রশাসনিক ভবন নয়, প্রতিষ্ঠানটির গার্মেন্টস ভবনও পেয়েছে ১০৬ নম্বর, যা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আরেক বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এসএম সোর্সিং-এর সঙ্গে যৌথভাবে। অর্থাৎ, বিশ্বসেরা প্রথম ও দ্বিতীয় পরিবেশবান্ধব কারখানা এখন বাংলাদেশের দখলে।
গত ৮ মে ইউএসজিবিসির পক্ষ থেকে যে তিনটি কারখানাকে নতুন করে লিড সনদ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে : তাসনিয়া ফেব্রিকস (প্রশাসনিক ভবন)- ১০৭ নম্বর, তাসনিয়া ফেব্রিকস (গার্মেন্টস ভবন)- ১০৬ নম্বর, কমফিট গোল্ডেন লিফ (মির্জাপুর)- ৮০ নম্বর। এই সবকটি সনদই ভিফোর.১ সংস্করণ অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে।
মূলত, ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউএসজিবিসির দেওয়া ‘লিড’ সার্টিফিকেশন হলো পরিবেশবান্ধব নির্মাণের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি। এটি মূলত ৯টি মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি দক্ষতা, পানির ব্যবহার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নির্মাণ উপকরণ, পরিবেশের ওপর প্রভাব। ১১০ নম্বরের মধ্যে কোনো ভবন ৮০-এর বেশি পেলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ হলে ‘গোল্ড’, ৫০-৫৯ হলে ‘সিলভার’ এবং ৪০-৪৯ ‘সার্টিফাইড’ হিসেবে স্বীকৃত হয়।
বিজিএমইএ ও ইউএসজিবিসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ২৪৩টি পোশাক ও টেক্সটাইল কারখানা ‘লিড’ সনদ পেয়েছে। এর মধ্যে ১০১টি কারখানা পেয়েছে ‘প্লাটিনাম’ সার্টিফিকেশন, ১২৮টি ‘গোল্ড’, ১০টি ‘সিলভার’ এবং ৪টি ‘সার্টিফায়েড’ পর্যায়ে রয়েছে।
এছাড়া বিশ্বের শীর্ষ ১০টি পরিবেশবান্ধব তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে এখন ৯টিই বাংলাদেশে। এর মধ্যে রয়েছে—তাসনিয়া ফেব্রিকস (প্রশাসনিক ও গার্মেন্টস ভবন), এসএম সোর্সিং, গ্রিন টেক্সটাইল, নিট এশিয়া, ইন্টিগ্রা ড্রেসেস, রেমি হোল্ডিংস, ফতুল্লা অ্যাপারেলস এবং একটি প্রতিষ্ঠান পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রাক্তন পরিচালক ও ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, এটি শুধু কারিগরি অর্জন নয়, বরং টেকসই উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি গঠনের দিক থেকেও এক ঐতিহাসিক মাইলফলক।
তিনি জানান, ভবিষ্যতের বৈশ্বিক বাজারে ইএসজি মানদণ্ড পূরণ করাই হবে টিকে থাকার অন্যতম শর্ত। বাংলাদেশের এই অর্জন আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে দেশের প্রতি আস্থা ও আকর্ষণ আরও বাড়াবে। একইসঙ্গে এটি কেবল পোশাকশিল্প নয় বরং অন্যান্য শিল্পের জন্যও সবুজ ভবন নির্মাণের একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে।
আপনার মতামত লিখুন :