বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে ডলারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো।
সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডব্লিউজিসি) প্রকাশিত এক জরিপে উঠে এসেছে, আগামী পাঁচ বছরে অধিকাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের স্বর্ণের রিজার্ভ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
জরিপে অংশ নেওয়া ৭৩টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে ৭৬ শতাংশ জানিয়েছে, তারা স্বর্ণের মজুত বাড়াবে। এক বছর আগে এই হার ছিল ৬৯ শতাংশ। পাশাপাশি প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ব্যাংক মনে করছে, ডলারনির্ভর রিজার্ভের পরিমাণ আগের তুলনায় কমবে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনার হার আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। গত তিন বছরে তারা কিনেছে এক হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি স্বর্ণ, যেখানে আগের দশকে এই পরিমাণ ছিল গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টন।
মূল কারণ, সংকটের সময় স্বর্ণের দাম বাড়ে, যা রিজার্ভকে আরও মূল্যবান ও স্থিতিশীল করে তোলে। যেমন, চলতি বছরের এপ্রিলেই প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম পৌঁছায় ৩,৫০০ ডলার, যা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের বিশ্লেষণ বলছে, ‘সংকটের সময়ে স্বর্ণের স্থিতিশীলতা, বৈচিত্র্য আনার ক্ষমতা এবং মূল্যস্ফীতি প্রতিরোধের সক্ষমতা-এই তিনটি প্রধান কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো স্বর্ণের মজুতে জোর দিচ্ছে।’ জরিপ অনুযায়ী, আগামী এক বছরের মধ্যেই স্বর্ণের রিজার্ভ আরও বাড়বে-এমন বিশ্বাস করছে ৯৫ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যেখানে এক বছর আগে এই হার ছিল ৮১ শতাংশ।
বিশেষ করে উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। ডব্লিউজিসি জানায়, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ৬৯ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণ মজুতের দিকে ঝুঁকছে, যেখানে উন্নত অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ৪০ শতাংশ।
তবে শুধু স্বর্ণ নয়, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় নানামুখী ঝুঁকিও এখন অনেক দেশের ভাবনায় রয়েছে। ৫৯ শতাংশ ব্যাংক জানিয়েছে, সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধ, শুল্ক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাও তাদের রিজার্ভ কৌশলে বড় প্রভাব ফেলছে।
তবে এই মজুত কোথায় রাখা হবে? উত্তরদাতাদের মতে, এখনো সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ভাণ্ডার ‘ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’।
বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যযুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা এবং অর্থনৈতিক চাপ বাড়ার বাস্তবতায় ডলারের একক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করছে বহু দেশ। তারা চাইছে, রিজার্ভ আরও নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য হোক। আর তাই, বিকল্পহীনভাবেই স্বর্ণকেই প্রধান ভরসা হিসেবে বেছে নিচ্ছে বিশ্বব্যাংকগুলো।
আপনার মতামত লিখুন :