কয়েক মাস ধরে লাগামছাড়া চালের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ভারত থেকে চাল আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে ধীরে ধীরে দাম কমছে। তবে সবজি, পেঁয়াজ ও মাছের বাজারে এখনো স্বস্তি ফেরেনি। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, চালের দামে সামান্য স্বস্তি মিললেও অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম এত বেশি যে পুরো মাসের খরচ মেলানো কঠিন হয়ে পড়ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নাজিরশাইল ও আতপ চালের দাম আগের তুলনায় কেজিতে ৫-৬ টাকা কমেছে। বর্তমানে নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৮৪-৮৬ টাকায়, যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৯০-৯২ টাকা। মোটা পায়জাম ও স্বর্ণা জাতের চাল এখন ৫৬-৬০ টাকায় মিলছে, যা আগে ছিল ৬২-৬৪ টাকা। তবে জনপ্রিয় মিনিকেট চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে, এখনো ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সেগুনবাগিচা বাজারের ব্যবসায়ী সালমান হোসেন বলেন, ভারত থেকে প্রচুর চাল আমদানি হচ্ছে। মোকামে দাম প্রতি বস্তায় ১০০-১২০ টাকা কমেছে। যদি আমদানি আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকে, তাহলে দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে সবজি ও পেঁয়াজের বাজারে তেমন পরিবর্তন নেই। ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙা, পটোল কেজিতে ৬০-৮০ টাকা, করলা ও বেগুন কেজিতে ৯০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বরবটি কেজিতে ১০০ টাকার কাছাকাছি। মৌসুমি সবজির দাম কিছুটা কমলেও এখনো অনেকের নাগালের বাইরে। পেঁপে ৪০ টাকা এবং আলু ৩০ টাকায় পাওয়া গেলেও পেঁয়াজের দাম মাত্র ৫-১০ টাকা কমেছে। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে চরম চড়াভাব বিরাজ করছে। ৭০০ গ্রামের একহালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৪ হাজার টাকায়। বড় ইলিশ প্রতি পিস দুই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট ইলিশের দামও কেজিতে ৮০০ টাকার নিচে নেই। চাষের চিংড়ি কেজিতে ৭৫০-৮০০ টাকা এবং নদীর চিংড়ি এক হাজার থেকে ১,২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রুই, কাতলা ও অন্যান্য দেশি মাছও কেজিতে ৩০-৫০ টাকা বেড়েছে।
এদিকে মুরগি ও ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা রয়েছে। ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১৭০-১৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। সোনালি মুরগি কেজিতে ৩০০-৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের ডিম প্রতি ডজন ১৩৫-১৪০ টাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
ক্রেতারা বলছেন, চালের দাম কমলেও অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম না কমলে তাদের কষ্ট লাঘব হবে না। নিউ মার্কেট এলাকার ক্রেতা রুবিনা আক্তার বলেন, চাল কিছুটা সস্তা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পেঁয়াজ, সবজি, মাছের দাম এত বেশি যে বাজার করে আর স্বস্তি পাই না। আগে এক হাজার টাকায় সপ্তাহের বাজার হয়ে যেত, এখন একদিনেরও বাজার হয় না।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, শুধু চাল নয়, অন্যান্য নিত্যপণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখা ও বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে সবজি ও পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা কমাতে হিমায়িত সংরক্ষণ ও সময়মতো আমদানির ব্যবস্থা জরুরি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন