ঢাকা বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০২৫

বিদেশি চাপে জনস্বাস্থ্য উপেক্ষা করায় সিএপিএইচআর এর উদ্বেগ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২৫, ০৭:২৯ পিএম
সিএপিএইচআর এর লোগো। ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশে ভেপিং ডিভাইসসহ নিরাপদ নিকোটিন পণ্য (এসএনপি) নিষিদ্ধ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কোয়ালিশন অব এশিয়া প্যাসিফিক টোব্যাকো হার্ম রিডাকশন অ্যাডভোকেটস (সিএপিএইচআরএ)।

সংগঠনটি মনে করছে, বিদেশি গোষ্ঠীর প্রভাবে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই জনস্বাস্থ্য উপেক্ষা করে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে।

সিএপিএইচআরএর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ সংশোধনের প্রস্তাবে ভেপিং ডিভাইস এবং ধূমপানের ওরাল অল্টারনেটিভসহ সব ধরনের নিরাপদ নিকোটিন পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, বিদেশি গোষ্ঠীর প্রভাবে অংশীজনের সঙ্গে কোনো আলোচনাই ছাড়াই এ প্রস্তাব করা হয়েছে, যা নীতি নির্ধারণ ও আইনি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার গুরুতর প্রশ্ন তোলে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ভোক্তা এবং ধূমপানের ক্ষতি হ্রাসকারী পক্ষের প্রতিনিধিদের নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে। এতে ভিন্নমত রোধ ও বৈজ্ঞানিক বিতর্ক বন্ধ করার প্রয়াস দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) ৫.৩ নম্বর ধারার অপব্যবহারও প্রমাণিত হচ্ছে।

সিএপিএইচআরএ জানিয়েছে, নিরাপদ নিকোটিন পণ্য নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবের পেছনে বিদেশি একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর হাত রয়েছে। বিশেষ করে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তাদের অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো-ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) নীতিনির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করছে। ২০০৮ সাল থেকে ব্লুমবার্গের এই তহবিলের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে এনজিওকে সহায়তা করা, সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং মন্ত্রণালয়গুলোতে উপদেষ্টা বসানো হয়েছে।

ঢাকায় ব্লুমবার্গের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের একটি কার্যালয় রয়েছে, যেখানে কয়েকজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা কাজ করেন। অন্যদিকে, সিটিএফকে এবং তাদের সহযোগী সংস্থাগুলোকে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের অফিসিয়াল পার্টনার হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত গোষ্ঠীগুলো সরাসরি নীতিনির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করছে।

সিএপিএইচআরএর এক্সিকিউটিভ কোঅর্ডিনেটর ন্যান্সি লুকাস বলেন, “এটা মূলত তামাক নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং নীতিনির্ধারণের বৈদেশিক আউটসোর্সিং। এতে বাংলাদেশ ঝুঁকির মুখে পড়ছে। বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত এনজিওগুলো দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে উপেক্ষা করে মানুষকে ধূমপানের ক্ষতি হ্রাসকারী নিরাপদ পণ্যের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে।”

সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিরাপদ নিকোটিন পণ্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধের প্রস্তাব দিলেও এশিয়ার অনেক দেশে উল্টোটা ঘটছে। সম্প্রতি পাকিস্তান ও ফিলিপাইনেও বিদেশি প্রভাবে এ ধরনের প্রস্তাব এসেছে, কিন্তু জনস্বার্থ বিরোধী প্রস্তাবগুলো প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক প্রমাণভিত্তিক জনস্বাস্থ্য নীতিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান এমনকি ব্লুমবার্গের অর্থায়নে পরিচালিত সিটিএফকে ও ভাইটাল স্ট্র্যাটেজির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিরাপদ নিকোটিন পণ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে নতুন ঝুঁকি তৈরি হবে। ভারত ও অস্ট্রেলিয়ায় এই নিষেধাজ্ঞার পর অবৈধ বাজার ও অনিয়ন্ত্রিত পণ্যের বিস্তার দেখা গেছে। এতে জনস্বাস্থ্যের উন্নতির চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়েছে।

সিএপিএইচআরএ বলেছে, বিশ্বে তামাকজনিত অসুস্থতার হার যেসব দেশে বেশি, তার অন্যতম বাংলাদেশ। একটি নিয়ন্ত্রিত ক্ষতি হ্রাস কৌশলের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, নিরাপদ নিকোটিন পণ্য ধূমপায়ীদের ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করে এবং ক্ষতির ঝুঁকি অনেক কমায়। অন্যদিকে, এসব পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা ধূমপানের ক্ষতি হ্রাসে কোনো ভূমিকা রাখবে না, বরং প্রক্রিয়াটিকে আরও পিছিয়ে দেবে।