ঢাকা বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০২৫

সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২৫, ০৭:৫১ পিএম
সরকারি লোগো। ছবি- সংগৃহীত

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খুব শিগগিরই দেশের প্রতিটি জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগের পরিকল্পনা করছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে নতুন ডিসিদের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে। ইতোমধ্যে নতুন ফিটলিস্ট তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই সিলেট জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার ডিসি নিয়োগে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সুবিধাভোগী বা বিতর্কিত কর্মকর্তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।

কেউ যদি ছলচাতুরি বা তথ্য গোপন করে ডিসি পদে নিয়োগ পান এবং পরে তা প্রমাণিত হয়, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইতোমধ্যে গত ১৮ আগস্ট সিলেটের নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রশাসনের আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম। উপসচিব পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ফিটলিস্ট প্রস্তুত প্রক্রিয়া

চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি থেকে নতুন ফিটলিস্ট তৈরির কাজ শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫তম ও ২৭তম ব্যাচের ২৬৯ জন উপসচিবের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে ফিটলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মৌখিক পরীক্ষা চলছে।

জনপ্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২৫ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১২ জন কর্মকর্তা ডিসির দায়িত্বে রয়েছেন। তবে ২৪তম ব্যাচের ২১ জন কর্মকর্তা ইতোমধ্যেই যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন, কিন্তু মাঠ প্রশাসন থেকে তাদের প্রত্যাহার করা এখনো সম্ভব হয়নি।

পূর্বের বিতর্ক ও সতর্কতা

এর আগে ২০২৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ১০৮ জন কর্মকর্তার একটি ফিটলিস্ট থেকে ৬১ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, যা তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। অনেক কর্মকর্তা নিজেদের ‘বঞ্চিত’ দাবি করে মন্ত্রণালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। এমন পরিস্থিতি সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করেছিল।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাপ্রাপ্ত একাধিক কর্মকর্তা গত বছরও ডিসি পদে নিয়োগ পেয়েছেন। এসব ঘটনা প্রতিফলিত হওয়ায় এবার প্রশাসন অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে।

প্রশাসনে অস্থিরতা ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে অসন্তোষ

কেবল ডিসি নিয়োগই নয়, বর্তমানে একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব নেই এবং ভারপ্রাপ্ত সচিব দিয়ে কাজ চলছে। কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, শীর্ষ পদগুলোতে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা প্রশাসনের দক্ষতা ও শৃঙ্খলাকে প্রভাবিত করছে।

তাদের মতে, দীর্ঘদিন আগে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বর্তমান ডিজিটাল প্রশাসন ব্যবস্থায় খাপ খাওয়াতে পারছেন না এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সক্ষম নন। এর ফলে প্রশাসনে শৃঙ্খলার অভাব ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে।

জনপ্রশাসনের অবস্থান

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ) মো. এরফানুল হক জানিয়েছেন, ‘ডিসি নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। কবে নাগাদ নিয়োগ দেওয়া হবে তা জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি চূড়ান্ত করবে। আমরা আশা করছি, দ্রুতই নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে।’

সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস-উর রহমান বলেন, ‘ডিসির নিয়োগ ফিটলিস্ট থেকে হবে। নির্বাচনের আগে যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে।’

বিশেষজ্ঞ মতামত

সাবেক সচিব ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘একটি সৎ, দক্ষ ও পেশাজীবী আমলাতন্ত্র ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব নয়। এখনো সময় আছে—সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্য লোক নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও ডিসিসহ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিলে রাষ্ট্র পরিচালনা কার্যকর হবে।’

নিয়োগে কমিটি

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, যুগ্ম সচিব ও তদূর্ধ্ব পদে নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলাজনিত বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের জন্য চারজন উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং জনপ্রশাসন সচিবকে নিয়ে ‘জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিই ডিসি নিয়োগসহ অন্যান্য বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।