ঢাকা বুধবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৫

সোনম ওয়াংচুক  ‘নায়ক’ থেকে ‘দেশদ্রোহী’

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৫, ০৩:৪০ এএম

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট রাত। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ও রাজ্যের অধিকার পাল্টে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। এমন সিদ্ধান্তের পর পুরো উপত্যকাজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর দমন অভিযানে শত শত কাশ্মীরিকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই রাতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলেন সোনম ওয়াংচুক। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সোশাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, “ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী, লাদাখের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য।”ভারতের অন্যতম সুপরিচিত উদ্ভাবক ও শিক্ষা সংস্কারক ওয়াংচুক তখন ইঙ্গিত করেছিলেন লাদাখবাসীর সেই বহু বছরের দাবির দিকে, শীতল মরুভূমি লাদাখকে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে আলাদা করে দেওয়া। এই অঞ্চলটি চীনের সীমান্তঘেঁষা ও পাকিস্তানও এর দাবি করে আসছে। আগস্ট ২০১৯ পর্যন্ত লাদাখ ছিল জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের অংশ।

কিন্তু মোদি সরকারের সিদ্ধান্তে এটি রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন প্রশাসনিক কাঠামো একটি ‘কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে’ পরিণত হয়। ফলে এটি সরাসরি নয়াদিল্লির অধীনে পরিচালিত হতে শুরু করে।তবে জম্মু ও কাশ্মীরের বাকি অংশকেও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা হলেও, সেখানে একটি স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত বিধানসভা বহাল রাখা হয়। কিন্তু লাদাখকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়াটা পরবর্তী ছয় বছরে শান্তিপ্রিয় লাদাখকে ধীরে ধীরে পরিণত করে রাজনৈতিক অস্থিরতার আগুনে। আর সেই আন্দোলনের অগ্রভাগে উঠে আসেন হতাশ ও ক্ষুব্ধ সোনম ওয়াংচুক। ওয়াংচুককে গত ২৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে নিজ রাজ্য থেকে এক হাজার মাইল দূরে রাজস্থানের যোধপুরের জেলে পাঠানো হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা-’ ও ‘সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র’।

অভিযোগ করা হয়, তার নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের একটি অংশ নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।  সেই সংঘর্ষে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর গুলিতে চারজন আন্দোলনকারী নিহত হন, যাদের মধ্যে এক সাবেক সেনা সদস্যও ছিলেন। তারা স্থানীয় বিজেপি কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। প্রশাসন ওয়াংচুককে সেই সহিংসতার প্ররোচক হিসেবে অভিযুক্ত করে।অদ্ভুতভাবে, এই সেই বিজেপি ও মোদি সরকার, যারা এর আগে লাদাখে বিভিন্ন প্রচারাভিযানে ওয়াংচুকের সহায়তা নিয়েছিল।

অন্য রাজ্যগুলোর বিজেপি সরকারও তাকে শিক্ষাবিদ পরামর্শদাতা হিসেবে আহ্বান করেছিল। কিন্তু আজ সেই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, যিনি একসময় বলিউডের অন্যতম বিখ্যাত ও সফল চলচ্চিত্রের অনুপ্রেরণা ছিলেন, দেশদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত। সরকারের পক্ষ থেকে এমনও ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে যে তার সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের পেছনে পাকিস্তানের প্রভাব থাকতে পারে।