গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাস ও মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার আলোচনা ‘ইতিবাচক’ পরিবেশে শেষ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবারও এই আলোচনা অব্যাহত ছিল। খবর: আলজাজিরার
মিসরের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিভিশন আল-কাহেরার প্রতিবেদনের বরাতে আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, মিসরের শার্ম আল-শেখ শহরে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে হামাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মধ্যস্থতাকারীরা বৈঠকে বসেন। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে এই আলোচনা হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আমি ‘প্রায় নিশ্চিত’ যে, গাজা নিয়ে শান্তিচুক্তি সম্ভব। এ ছাড়া ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এরই মধ্যে ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ’ কিছু বিষয়ে সম্মত হয়েছে বলেও জানান তিনি। স্থানীয় সময় সোমবার ওভাল অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। খবর এনডিটিভির। হামাসের নিরস্ত্রীকরণ শান্তিচুক্তির পূর্বশর্তগুলোর একটি কি নাÑ সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমার কিছু ‘রেড লাইন’ আছে। যদি নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ না হয়, তাহলে আমরা চুক্তি করব না।” তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমি মনে করি, আমরা ভালোভাবেই এগোচ্ছি এবং হামাস এমন কিছু বিষয়ে রাজি হয়েছে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ ট্রাম্প জানান, তিনি চুক্তি নিয়ে আশাবাদী, কারণ হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিদল তার প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনার অধীনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে মিসরে পরোক্ষ আলোচনা শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমরা একটা চুক্তি করতে যাচ্ছি। এটা বলা কঠিন, কারণ বহু বছর ধরে অনেকেই কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু আমি মনে করি এবার তা সম্ভব।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা গাজা নিয়ে একটি চুক্তি করবÑ আমি প্রায় নিশ্চিত।’ এ ছাড়া ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, ট্রাম্প নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্প এই দাবি অস্বীকার করে বলেন, ‘নেতানিয়াহু চুক্তি নিয়ে খুবই ইতিবাচক।’
গাজা যুদ্ধের দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে এক জরুরি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। মঙ্গলবার তিনি এই আহ্বান জানান। এতে তিনি গাজা, ইসরায়েল এবং সমগ্র অঞ্চলে অবিলম্বে সব ধরনের শত্রুতা বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেন, এমন কোনো পদক্ষেপ নেবেন না, যাতে সাধারণ মানুষকে নিজেদের জীবন ও ভবিষ্যৎ দিয়ে মূল্য দিতে হয়। হামাস ও অন্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে গুতেরেস একই সঙ্গে গাজায় এখনো আটক সব জিম্মিকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সব পক্ষের জন্যই এই কষ্টের অবসান ঘটান। এটি এমন এক মানবিক বিপর্যয়, যার মাত্রা কল্পনাকেও হার মানায়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তার পর থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৭ হাজার ১৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও এক লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ ফিলিস্তিনি। হতাহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
জাতিসংঘের মতে, এই সংখ্যা বাস্তবের তুলনায় কম। কারণ হাজার হাজার মৃতদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকতে পারে। গুতেরেস বলেন, সেই অন্ধকার দিনের ভয়াবহতা আমাদের সবার স্মৃতিতে চিরকাল অঙ্কিত থাকবে। দুই বছর পরও জিম্মিরা এখনো অমানবিক অবস্থায় বন্দি। আমি জিম্মিদের পরিবার ও বেঁচে ফেরা ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তাদের অসহনীয় যন্ত্রণা অবর্ণনীয়। তিনি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আহ্বান জানান, জিম্মিদের অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিন। স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও একটি বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করুন, যাতে আর কোনো রক্তপাত না ঘটে।
গুতেরেস বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শান্তি প্রস্তাব এই মর্মান্তিক সংঘাতের অবসানের একটি সুযোগ, যা কাজে লাগাতে হবে। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের শাসন সব সময় সম্মানিত হতে হবে এবং জাতিসংঘ শান্তি প্রচেষ্টায় তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে।
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইসরায়েলের পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার ও মানবিক সহায়তা প্রবেশের নিশ্চয়তা দিতে একটি কার্যকর প্রক্রিয়া গঠনের আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাতি। মঙ্গলবার স্লোভেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আবদেলাতি বলেন, ‘বর্তমান আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আমরা আশা করছি, এই পর্যায়েই গাজায় যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের অবসান ঘটবে।’
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা সোমবার মিসরের লোহিত সাগর উপকূলীয় শহর শার্ম আল-শেখে শুরু হয়েছে। আবদেলাতি আরও জানান, শার্ম আল শেখের আলোচনায় মূলত এমন একটি প্রক্রিয়া তৈরির বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে, যা গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার ও জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিঃশর্ত মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করবে।