হঠাৎ করেই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে। গত তিন দিনে ৩২২ জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। যাদের মধ্যে বয়স্ক রোগীর সংখ্যাই বেশি। ভর্তি হওয়া রোগীদের অধিকাংশের বাড়ি জয়পুরহাট পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনদের দাবি, পৌরসভার সরবরাহ করা পানির কারণে তারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আর পূজা উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত মেলায় খোলা খাবার পরিবেশনকেই দায়ী করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, হঠাৎ করে গত শনিবার জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৩৮ জন ভর্তি হন। পরের দিন রোববার ভর্তি হন ১০১ জন এবং একইভাবে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ভর্তি হন ৮৩ জন। ডায়রিয়া রোগের এমন চাপে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। তবে গত দুদিনের তুলনায় সোমবার থেকে রোগীর চাপ কমতে শুরু করেছে। চিকিৎসায় অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের তিন তলায় ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো ওয়ার্ডেই ভর্তি ডায়রিয়া রোগীরা। এ ছাড়া জায়গা না হওয়ায় ওয়ার্ডের বাইরের করিডোরের মেঝেতেও ভর্তি রোগীদের স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। এ সময় কথা হয় হাসপাতালে ভর্তি থাকা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী জয়পুরহাট পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের ধানমন্ডি মহল্লার বাসিন্দা জেসমিন আক্তারের (৬০) স্বামী নুর মোহাম্মদের সাথে। তিনি বলেন, গত শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করি। তার বমি ও পাতলা পায়খানা বন্ধ হচ্ছে না। এসে দেখি পুরো হাসপাতালে শুধু ডায়রিয়া রোগী। তিন দিন ধরে ডাক্তাররা চিকিৎসা দিচ্ছেন, কিন্তু কিছুতেই ভালো হচ্ছে না। পাশের শয্যায় ভর্তি থাকা একই মহল্লার ডায়রিয়া রোগী গোপাল প্রসাদ আগরওয়ালা জানান, গত রোববার থেকে তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বমি বন্ধ হলেও পায়খানা বন্ধ হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ডায়রিয়া ওয়ার্ডের অধিকাংশ রোগীই জয়পুরহাট পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। বাইরের রোগীও আছে তবে সংখ্যায় কম। তার ধারণা পৌরসভা থেকে সরবরাহ করা পানি পান করে তারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে ধানমন্ডি মহল্লার মরিয়ম বেগম বলেন, পৌরসভার সরবরাহ করা পানি পান না করেও তার তিনজন স্বজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। পাঁচবিবির আয়মা গোপীনাথপুর থেকে আসা নুর ইসলাম বলেন, গত তিন দিন আগে আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার পর তার পিতা আব্দুর রউফ (৭০) ও দুই ভাই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রোববার গভীর রাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
বারবার স্যালাইন দিয়েও ভালো হচ্ছে না। পূজার মেলার মিঠাই মিষ্টান্ন খাওয়ার পর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রোববার সকাল ১০টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের পারভিন আক্তার (৩০)। তার মা বলেন, সেই থেকে চিকিৎসা চললেও পায়খানা ও বমি বন্ধ হচ্ছে না। তার কিডনির সমস্যাও আছে। এ অবস্থায় মেয়েকে সুস্থ করা নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন।
হাসপাতালের সহকারী চিকিৎসক মো. হারিছ বলেন, গত তিন দিন থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অধিকাংশ রোগী ভর্তি হয়েছে জয়পুরহাট পৌরসভার বিভিন্ন মহল্লার। পৌরসভার পানির কারণে ডায়রিয়া রোগ হতে পারে। পানি পরীক্ষা করলেই বিষয়টি জানা যাবে।
জয়পুরহাট পৌরসভার স্যানেটারি ইন্সপেক্টর মামুনুর রশীদ বলেন, পৌরসভার পানির কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছেÑ এমন অভিযোগের পর আক্রান্ত এলাকা থেকে পানি সংগ্রহ করে বগুড়ায় ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষায় পানির কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া পানির কারণে ডায়রিয়া হলে গোট পৌরসভার বাসিন্দারা আক্রান্ত হতেন। কাজেই অভিযোগটি সঠিক নয়।
জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক বলেন, গত তিন দিন থেকেই হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেশি। তবে বর্তমানে কিছুটা কমেছে। তিনি বলেন, পূজা উৎসবকে ঘিরে জেলার বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত মেলায় উন্মুক্ত খাবারের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে বলে তারা ধারণা করছেন। পৌর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, কোথাও কোনো লিকেজ থাকলে মেরামত করার কথা বলা হয়েছে।