জাপানকে হারিয়ে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো)-র সাধারণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা।
সোমবার প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর নির্বাহী পর্ষদের ২২২তম অধিবেশনে অনুষ্ঠিত ভোটে রাষ্ট্রদূত তালহা জাপানের রাষ্ট্রদূত তাকেহিরো কানোর বিপক্ষে বিজয়ী হন। তিনি জাপানের রাষ্ট্রদূত তাকেহিরো কানোকে ৩০-২৭ ভোটে পরাজিত করেছেন।
এ পদে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ, জাপান, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও গত সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়।
রাষ্ট্রদূত তালহা ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই শীর্ষ পদে নির্বাচিত হলেন। তিনি অক্টোবরের শেষের দিকে উজবেকিস্তানের সমরকন্দে অনুষ্ঠেয় ৪৩তম সাধারণ পরিষদের সভায় বর্তমান সভাপতি, রোমানিয়ার রাষ্ট্রদূত সিমোনা মিরেলা মিকুলেস্কুর স্থলাভিষিক্ত হয়ে আগামী দুই বছরের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা বাংলাদেশের ফরেন সার্ভিসের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক। ১৯৯৫ সালে পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচে যোগদানের পর তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে নিউইয়র্ক, তেহরান, জেনেভা ও লন্ডনে বাংলাদেশের মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সদর দপ্তরে অবস্থানকালে তিনি রাষ্ট্রাচার প্রধান ও মহাপরিচালক (পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০২১ সালে তাকে ফ্রান্স, মোনাকো ও আইভরি কোস্টে রাষ্ট্রদূত এবং ইউনেস্কোর স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রদূত তালহার নেতৃত্বে ইউনেস্কোতে নির্বাহী বোর্ডসহ ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে জয়লাভ করেছে বাংলাদেশ। তারই উদ্যোগে ‘ঢাকায় রিকশা ও রিকশা শিল্প’ ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
তিনি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ৪ বাস্তবায়নে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের স্টিয়ারিং কমিটির শেরপা হিসেবে টানা দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশগুলোর জন্য বৈশ্বিক শিক্ষা তহবিল গঠনের উদ্যোগে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।
এ ছাড়া তিনি ইউনেস্কোতে সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির বৈচিত্র্য সম্পর্কিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদ (২০০৫ কনভেনশন) এবং বেসরকারি অংশীদারদের পর্ষদ (এনজিপি)-এরও সভাপতিত্ব করেছেন।
এ ঐতিহাসিক বিজয়ের পর রাষ্ট্রদূত তালহা বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের জন্য এক গৌরবোজ্জ্বল অর্জন। বহুপাক্ষিক কূটনীতির এ সংকটময় সময়ে আমি ইউনেস্কোর ম্যান্ডেট সমুন্নত রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাব।’
তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তার বিজয় বাংলাদেশের দেশ-বিদেশে অবস্থানরত সকল নাগরিকের প্রতি উৎসর্গ করেন।