ঢাকা শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫

ভূমিকম্পে যাদের হারালাম

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৫, ০৫:৫৫ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

দেশের ইতিহাসে ঘটে গেল একটি ভয়ানক অধ্যায়। মুহূর্তেই সারা দেশ ও দেশের মানুষ কেঁপে উঠল। যদি এখানেই শেষ হতো, তবে ভালোই ছিল। কিন্তু ঘটনা শেষ হলো মৃত্যু–আহত ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ভেতর দিয়ে। বলছি গতকাল শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পের কথা। ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন পর্যন্ত ৩ জেলায় ১১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

বিভিন্ন প্রতিনিধির কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নরসিংদীতে পাঁচ জন, ঢাকায় চার জন এবং নারায়ণগঞ্জে দুই জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সারা দেশে চার শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন এবং অনেক ভবন ও স্থাপনায় ফাটল দেখা দিয়েছে।

নরসিংদীতে ৫ জনের মৃত্যু

ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে নরসিংদী থেকে প্রথম মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় কাজম আলী (৭৫) নামের এক বৃদ্ধের। জানা যায়, মাটির ঘরের দেয়ালচাপায় তার মৃত্যু হয়। নিহত কাজম আলী নরসিংদীর পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতা পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের চাচাতো ভাই আউয়াল মিয়া।

এদিকে নরসিংদীর গাবতলীতে ভূমিকম্পে বাসার সানশেড ভেঙে আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন বাবা–ছেলে দুজনই মারা গেছেন। নিহতরা হলেন- ছেলে ওমর (১০) ও বাবা হোসেন উজ্জ্বল (৪০)।

জানা যায়, ভূমিকম্পের সময় বাবা দেলোয়ার হোসেন তার ছেলে ওমরসহ তিন সন্তানকে নিয়ে বাইরে যাচ্ছিলেন। এ সময় বাসার সানশেড ভেঙে তাদের ওপর পড়লে তারা গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বাবা ও ছেলেকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে দুপুরে চিকিৎসক ছেলে ওমরকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর সন্ধ্যায় বাবা দেলোয়ার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বর্তমানে তার দুই মেয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে।

এ ছাড়া একই জেলার পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজীরচর নয়াপাড়া এলাকার মৃত সিরাজ উদ্দীনের ছেলে নাসির উদ্দিন (৬৫) ভূমিকম্পের সময় স্ট্রোক করে নিজ বাড়িতে মারা যান। একই এলাকার আরও একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। তবে এখনো তার নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের গাজকিতলা (পূর্বপাড়া) গ্রামের ফোরকান (৪০) ভূমিকম্পের কম্পনে গাছ থেকে পড়ে যান এবং তাকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পর ঢাকা মেডিক্যালে রেফার করা হয়। ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নরসিংদী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান জানান, ভূমিকম্পে ৪ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বাকি একজনের মৃত্যুর বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে, পরে জানানো হবে।

নারায়ণগঞ্জে ২ জনের মৃত্যু

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় ভূমিকম্পে দেয়াল ধসে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন তার মেয়ে। একই উপজেলায় ভূমিকম্পে একটি টিনশেড বাড়ির দেয়াল ধসে ফাতেমা (১) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় শিশুর মা কুলসুম বেগম ও প্রতিবেশী জেসমিন বেগম আহত হয়েছেন। এ ছাড়া জেলায় আরও অনেকে আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

ঢাকায় ৪ জনের মৃত্যু

ঢাকায় ভূমিকম্পের সময় বংশালের কসাইটুলীর একটি পাঁচতলা ভবনের রেলিং হঠাৎ ধসে তিন জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ছিলেন মিটফোর্ড মেডিক্যাল কলেজের ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম, হাজী আব্দুর রহিম এবং মেহরাব হোসেন রিমন।

অন্যদিকে একই এলাকায় ঘটনায় নিহত হয়েছেন বাবা আব্দুর রহিম ও তার ছেলে আব্দুল আজিজ রিমন। তাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চার ভাইয়ের মধ্যে আব্দুর রহিম তৃতীয়। তিনি ঢাকার সদরঘাট এলাকায় কাপড়ের ব্যবসা করতেন। পরিবার নিয়ে সেখানেই থাকতেন। শুক্রবার সকালে ছেলে আব্দুল আজিজ রিমনকে সাথে নিয়ে মাংস কিনতে যান বংশালের কসাইটুলীতে। ওই সময় হঠাৎ ভূমিকম্পে ৫ তলা ভবনের ছাদ থেকে রেলিং ভেঙে তাদের দুইজনের মাথায় পড়ে।

ঘটনাস্থলেই নিহত হন বাবা আব্দুর রহিম এবং হাসপাতাল নেওয়ার পর মারা যায় তার ছেলে আব্দুল আজিজ রিমন। রিমন কুরআনের হাফেজ।

এ ছাড়া রাজধানীর মুগদার মদিনা বাগে ভূমিকম্পের সময় নির্মাণাধীন ভবনের রেলিং ধসে পড়ে মো. মাকসুদ (৫০) নামের এক নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পুলিশ তার লাশ রেখে গেছে, তবে কোনো কাগজপত্র দেয়নি।