আপনি বাংলাদেশি কিন্তু বিদেশে থাকেন। আপনি এখন চাইলে বিদেশে থেকেই দেশের ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রায় হিসাব খুলতে পারেন। আবার আপনি বিদেশে অবস্থান করলেও আপনার পক্ষে নিকটাত্মীয় এমন হিসাব খুলতে পারছেন। এটি ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিং বা অফশোর ব্যাংকিং হিসাব নামে পরিচিত। বৈদেশিক মুদ্রা জমা রাখলে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এই হিসাবে যে মুনাফা দিচ্ছে, তা অনেক দেশের চেয়ে বেশি।
ব্যাংকগুলো সূত্রে আরও জানা গেছে, অফশোর ব্যাংকিং হিসাবে বিদেশি মুদ্রায় আমানত রাখার পর যে মুনাফা মিলছে, তার পুরোটাই আয়করমুক্ত। এই অর্থ নিয়ে দেশের কোনো সংস্থা প্রশ্নও করছে না। যেকোনো প্রয়োজনে মুনাফাসহ পুরো জমানো অর্থ আমানতকারী তাঁর অবস্থান করা দেশে নিতে পারছেন।
অফশোর ব্যাংকিং হিসাব খোলায় এখন জোর দিচ্ছে বেসরকারি খাতের দি সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্–বাংলা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক। ফলে দিন দিন ব্যাংকগুলোতে প্রবাসীদের এই হিসাব খোলা বাড়ছে। জানা গেছে, অফশোর ব্যাংকিং হিসাবগুলোয় এখন পর্যন্ত জমা পড়েছে প্রায় ৫ কোটি বা ৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ। এর মধ্যে কেবল সিটি ব্যাংকেই জমা হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
বেসরকারি খাতের দি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, অফশোর ব্যাংকিং হিসাব আমাদের ব্যাংক খাত ও অর্থনীতির জন্য যুগান্তকারী ঘটনা। এর ফলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের পাশাপাশি ডলারের জোগানে নতুন এই খাত যুক্ত হয়েছে। এই ডলার দিয়ে আমরা আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছি। আবার আন্তব্যাংকে বিক্রিও করা যাচ্ছে। ফলে জোগান বেড়ে ডলারের সংকট অনেকটা কমে এসেছে।
যেভাবে হিসাব খুলবেন
ডলার–সংকটের মধ্যে গত বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক এই হিসাব খোলার সুযোগ দিয়েছে। অফশোর ব্যাংকিংয়ে হিসাব খুলতে ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। বিদেশে বসেই ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইটে ঢুকে এই হিসাব খোলা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জমা দিতে হচ্ছে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব–সংক্রান্ত তথ্যের পাশাপাশি বিদেশে থাকার প্রমাণপত্র ও কাজের পরিচয়পত্র। সঙ্গে দিতে হচ্ছে ছবি। দেশে যদি কেউ প্রবাসীর পক্ষে এই হিসাব পরিচালনা করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর বিস্তারিত তথ্যও জমা দিতে হয়।
যেহেতু বিদেশে অবস্থানরত কারও পক্ষে তাঁর বাংলাদেশি নিকট আত্মীয় এই হিসাব খুলতে পারেন, তাই এ–সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দিতে হবে। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশির পক্ষে দেশে যিনি এই হিসাব খুলবেন, তাঁর সম্পর্কে তথ্য দিতে হবে। দুজনকেই পরিচয়পত্র, ছবি ও অন্যান্য নথি জমা দিতে হবে। ব্যাংকের ওয়েবসাইটে অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট বা ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট লিখে ওয়েবসাইটে সার্চ করলেই এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যাচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :