সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৫, ০৪:৪৮ এএম

নিবন্ধন পেতে আবেদনের হিড়িক

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৫, ০৪:৪৮ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশে রাজনৈতিক দল গঠনের জোয়ার দেখা যায়। তবে রাজনৈতিক দল গঠন করা গণতান্ত্রিক অধিকার। দেশের যেকোনো নাগরিক চাইলেই একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারেন। তবে আত্মপ্রকাশ করলেই সব দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে না। তার জন্য প্রয়োজন নিবন্ধন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধন পেতে আগ্রহী নতুন রাজনৈতিক দলগুলো অতিতৎপর। গতকাল রোববার নিবন্ধন আবেদন করার শেষ দিনে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নতুন দলগুলোর আবেদনের হিড়িক দেখা যায়। এবার নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে ১৪৭টি নতুন রাজনৈতিক দল।

এর মধ্যে রোববারই (২২ জুন ) আবেদন করেছে ৭৭টি রাজনৈতিক দল। এ ছাড়া আরও কয়েকটি দল আবেদন গ্রহণের মেয়াদ ফের বাড়ানোর জন্য গতকাল আবেদন জানিয়েছে। তবে ইসি বলছে, আবেদনের মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না তা এখনো ঠিক নয়। তবে যেসব আবেদন জমা হয়েছে, সেগুলো শিগগিরই প্রাথমিক বাছাইয়ের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

রোববার নতুন দল নিবন্ধন আবেদনের শেষ দিনে নির্বাচন কমিশনের সামনে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। সকাল থেকে দল নিবন্ধনের আবেদন নিয়ে ভিড় করেন নতুন যাত্রা শুরু করা এসব দলের শীর্ষ নেতারা। নিবন্ধন আবেদন নিয়ে দলের চেয়ারম্যান, মহাসচিবও যেমন সশরীরে আসছেন, তেমন দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ট্রাক এবং ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে এসেছেন নিবন্ধন পেতে।

একই সাথে, নিবন্ধনের সময় পুনরায় বাড়ানোর আবেদন করছে বেশ কিছু দল। কিছু দল মাত্র দুই মাসে বা এর চেয়ে কম সময়ে কীভাবে নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে জনমনে। এ ছাড়া  ৯৭ শতাংশ নতুন দলের বেশির ভাগই নামসর্বস্ব।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, এবার নতুন দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে ১৪৭টি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আবেদন ছিল ৭০টি। বাকি ৭৭টি দল গতকাল রোববার আবেদনের গ্রহণের শেষ দিনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। 

প্রসঙ্গত, গত ১০ মার্চ নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইসি। প্রথমে আবেদনের শেষ সময় ছিল ২০ এপ্রিল। বিভিন্ন দলের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পরে আবেদনের সময় ২২ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫৫। 

নিবন্ধন পেতে আগ্রহী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আগ্রহ ছিল জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আবেদন নিয়ে। দলটি নিবন্ধন শর্ত পূরণ করে সেসব কাগজপত্র ট্রাকে করে নির্বাচন ভবনে নিয়ে যান। দলটি তাদের নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ চেয়েছে।

এই নিবন্ধন পেলেই এনসিপির পক্ষে দল হিসেবে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ মিলবে। নিবন্ধনের আবেদন জমা দেওয়ার সময় নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীর সঙ্গে ছিলেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন।

এ সময় নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতে যে শর্ত পূরণ করতে হয়, তার জন্য যত কাগজপত্র প্রয়োজন তা ট্রাকে করে নিয়ে আসা হচ্ছে। আমাদের একটি প্রতিনিধিদল ভেতরে গিয়ে আবেদনের মূল কাগজপত্র জমা দিয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, রোববার নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দেওয়া দলগুলোর মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জনতার পার্টি বাংলাদেশ (জেপিপি); ‎ গণদল, বাংলাদেশ জনজোট পার্টি (বাজপা); বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ সমতা পার্টি; বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন; বাংলাদেশ সিটিজেন পার্টি; ইসলামী ঐক্যজোট, নতুন বাংলাদেশ পার্টি (এনবিপি); বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা পার্টি।

আবেদন জমা দেওয়া দলগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে, বাংলাদেশ গণবিপ্লবী পার্টি; ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী ন্যাপ); বাংলাদেশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ফেডারেশন; জনতার দল; বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা জনতা পার্টি; বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল); বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি (বিসিপি); জাতীয় ন্যায়বিচার পার্টি; বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিডিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), আ আমজনগণ পার্টি অন্যতম। 

নির্বাচন ভবনে আবেদন জমা দিয়ে জেপিবির মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছি। নিবন্ধন বিধিমালার যে শর্ত আছে সেগুলো পালন করা খুব কষ্টকর। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের এ বিধিমালার কিছু কিছু বিধিমালা সংস্কারের প্রস্তাব রেখেছে। 

জনতার দল আহ্বায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামাল ও সদস্যসচিব আজম খান আবেদন জমা দেন। আবেদন জমা দেওয়ার পর শামীম কামাল সাংবাদিকদের বলেন, নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ করে আমরা আবেদন করেছি। আমাদের জেলা ও উপজেলা কমিটি আইন অনুযায়ী গঠন করা হয়েছে। এখন বাকি সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।

নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেলে নির্ধারিত প্রতীকে ভোট করতে পারবে সংশ্লিষ্ট দলের প্রার্থীরা; ভোটে অংশ নিতে দলের প্রার্থীর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এদিকে গত বছরের ৫ আগস্টের পর গেল ১০ মাসে গঠিত হয়েছে কমপক্ষে ৩০টি দল। বিশ্লেষকরা বলছেন, মাত্র দুই মাস আগে আত্মপ্রকাশ করা দলও এবার আবেদন জমা দিয়েছে। এত কম সময়ে কীভাবে নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ করা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন আছে জনমনে। 

আবেদনকারী দলগুলো সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাদের মধ্যে মাত্র ২-৩ শতাংশ দলের নিবন্ধনের শর্ত পূরণের যোগ্যতা রয়েছে। বাকি ৯৭ শতাংশ দলের বেশির ভাগই নামসর্বস্ব। অনেক দলের কার্যালয়ের ঠিকানা, এমনকি ফোন নম্বর পর্যন্ত ভুয়া।

আবেদনকারী অনেক দলের নেতাকর্মী তো দূরের কথা, বেশির ভাগেরই নেই কার্যালয়। ইসিতে দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ দলের কোনো অস্তিত্বই নেই। কমিশনে উল্লিখিত ঠিকানায় রয়েছে হয় অন্য লোকের অফিস অথবা মানুষের বসতবাড়ি। এসব দলের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের বেশির ভাগই ব্যবসায়ী, সাবেক আমলা ও পেশাজীবী। এর মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি ছাড়া বেশির ভাগ দলের অস্তিত্ব শুধু কাগজে-কলমে। 

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার  বলেন, নতুন দলের জন্ম ইতিবাচক হলেও তা যদি নামসর্বস্ব ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষা বা আলোচনায় আসার জন্য গঠিত হয় তা গণতান্ত্রিক চর্চার সুফল বয়ে আনবে না। এসব দল দেশ ও জনগণের কোনো কাজেও আসবে না। কারণ তাদের অনেকেরই উদ্দেশ্য ভোটের আগে বড় বড় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা বা আসন ভাগাভাগি করে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করা। 

ইসি সূত্র জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলের ইসির নিবন্ধন পেতে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর অফিস, অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন (মহানগর) থানায় কার্যালয় এবং প্রতিটি কার্যালয়ে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে।

এর বাইরে নিবন্ধনের জন্য দলের গঠনতন্ত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বিধান রয়েছে। যেমন- কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা, সব পর্যায়ের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ সদস্যপদ নারীদের জন্য নির্ধারিত রাখা এবং পর্যায়ক্রমে ২০৩০ সালের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী বা শ্রমিক ও অন্য কোনো পেশার সদস্যদের সমন্বয়ে অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন না থাকা ইত্যাদি। 

নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে বিদ্যমান আইন-বিধি অনুযায়ী ১০টি তথ্য আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। নিবন্ধন ফি হিসেবে দিতে হবে ৫ হাজার টাকা, যা অফেরতযোগ্য।

দলীয় প্যাডে দরখাস্তের সঙ্গে দলের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনি ইশতেহার (যদি থাকে), দলের বিধিমালা (যদি থাকে), দলের লোগো ও দলীয় পতাকার ছবি, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্যের নামের তালিকা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সর্বশেষ স্থিতি, তহবিলের উৎস, দল নিবন্ধনের আবেদনকারীর ক্ষমতাপত্র, নিবন্ধন ফি বাবদ অফেরতযোগ্য ট্রেজারি চালানের কপি এবং নিবন্ধনের তিনটি শর্তের মধ্যে যেকোনো একটি পূরণের প্রমাণ জমা দিতে হবে।

ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, নিবন্ধনের জন্য জমা পড়া আবেদনগুলো যাচাই-বাছাইয়ে ইসির একটি কমিটি রয়েছে। নিবন্ধনের আগে আমরা দেখব, আবেদনকারী শর্ত পূরণ করেছে কি না। আইনে উল্লিখিত শর্তগুলো পূরণ করতে না পারা কোনো দলকেই নিবন্ধন দেওয়া হবে না। সেই লক্ষ্যে আবেদনকারী দলগেুলোর অফিস ও ঠিকানা, সাংগঠনিক কার্যক্রম খুঁজে বের করা এবং নথি-সংবলিত সব ধরনের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে মাঠে কাজ করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।

অন্তর্বর্তী সরকারের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ডিসেম্বরে ভোটের লক্ষ্য ধরে নতুন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দিতে গত ১০ মার্চ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইসি। সে সময় ইসিতে আবেদন করে ৬৫টি নতুন রাজনৈতিক দল।  গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশে ইসি থেকে নিবন্ধন পেয়েছে ৬টি দল। এগুলো হচ্ছে- এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজিপি) ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি। 

এর আগে গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইসিতে ৯৩টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। শেষ পর্যন্ত নিবন্ধন পায় মাত্র দুটি দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। নিবন্ধন পায়নি ৮৭টি দল।
 

Link copied!