রাজধানীর কলাবাগানে স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে রেখে পালিয়ে যাওয়া স্বামী মো. নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে কলাবাগান থানার পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রীকে হত্যা করার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন নজরুল।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর বংশাল থানার নবাবপুর রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে নজরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কলাবাগান থানা সূত্রে জানা যায়, গত রোববার রাত ১১টায় নজরুল কলাবাগান থানার ১ নম্বর লেনের ২৪ নম্বর বাসার ভাড়া করা ৬(বি) ফ্ল্যাটে ফিরে দেখেন ফ্ল্যাটের দরজার তিনটি লকের মধ্যে দুটি খোলা। স্ত্রী তাসলিমা আক্তারের (৪২) প্রতি দীর্ঘদিনের সন্দেহ—পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক ও তার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার ভয় তাকে উত্তেজিত করে তোলে।
এরপর রাত ১২টার দিকে ঘুমন্ত স্ত্রীর মাথায় ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি। এরপর লাশটি টুকরো করে গামছা দিয়ে বেঁধে, বিছানার চাদর ও ওড়না দিয়ে মুড়িয়ে বাসার ফ্রিজে লুকিয়ে রাখেন। পরে রক্তমাখা তোশক উল্টিয়ে, মেঝে পরিষ্কার করে এবং নিজের জামাকাপড় ধুয়ে আলামত গোপনের চেষ্টা করেন।
পরদিন সকালে নজরুল তার বড় মেয়ে নাজনীন আক্তারকে জানান, তাদের মা অন্য পুরুষের সঙ্গে পালিয়েছে। এ সময় নাজনীন আক্তার ঘরের দেওয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পায়। এরপর নজরুল তার দুই মেয়েকে নানার বাড়ি রেখে আসার কথা বলে রাজধানীর আদাবরে তাদের ফুফুর বাসায় রেখে নিজের প্রাইভেটকারে পালিয়ে যান।
পরে এ বিষয়ে সন্দেহ হলে ভুক্তভোগীর ছোট ভাই নাঈম হোসেন ও তার দুই মেয়ে কলাবাগান থানায় এসে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলাবাগান থানা-পুলিশের একটি দল ওই ফ্ল্যাটে উপস্থিত হয়ে দরজার তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ঘরের মধ্যে রাখা ডিপ ফ্রিজ খুলে ওপরের অংশ থেকে মাছ-মাংস সরালে চাদর দিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায় তাসলিমা আক্তারের মৃতদেহ দেখতে পায় পুলিশ।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই দিন রাতে তাসলিমার ছোট ভাই নাঈম হোসেন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় কলাবাগান থানা-পুলিশ তাসলিমার স্বামী মো. নজরুল ইসলামের অবস্থান শনাক্ত করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নজরুল ইসলাম ও তাসলিমা আক্তার দম্পতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য কলহ চলছিল। নজরুল ইসলাম অবৈধ সম্পর্কের সন্দেহে স্ত্রীকে প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। এমনকি তিনি ভয় পেতেন, স্ত্রী তার সম্পত্তি ও ব্যাংকে রাখা অর্থ হাতিয়ে নেবেন। এই চরম সন্দেহ ও নিয়ন্ত্রণের মানসিকতা থেকেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে।