গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি পণ্ড করতে বিভিন্ন স্থান থেকে সমন্বিতভাবে হামলা চালানো হয়। অভিযোগ উঠেছে, দিল্লি থেকে সরাসরি নির্দেশনা দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা।
দেশের একটি গণমাধ্যম জানায়, এনসিপির শীর্ষ নেতাদের হত্যা এবং কর্মসূচি বানচাল করাই ছিল মূল লক্ষ্য। শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করেও গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। ফাঁস হওয়া একাধিক অডিও বার্তায় তাকে সরাসরি হামলার নির্দেশ দিতে শোনা গেছে।
একটি অডিও বার্তায় শেখ হাসিনাকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালকে বলতে শোনা যায়, ‘ওরা টুঙ্গিপাড়ায় আমার বাবার কবর ভাঙতে চায়। ওদের কোনোভাবেই গোপালগঞ্জে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। কেউ যেন জীবিত ফিরে না যায়।’
আরেকটি অডিওতে তিনি ছাত্রলীগ সভাপতি নিউটন মোল্লাকে বলেন, ‘যেভাবেই হোক, ওদের প্রতিহত করো। ওরা ঢুকলে যেন একজনও বেঁচে না যায়।’
এই বার্তাগুলোর পরদিন, ১৭ জুলাই সকালে এনসিপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ ভ্যান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং গুলিবর্ষণসহ একাধিক সহিংস ঘটনা ঘটে। গোপালগঞ্জ পৌর পার্ক এলাকায় এসব হামলার নেতৃত্বে ছিলেন আতাউর রহমান পিয়াল।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা শুধু ছাত্রলীগ নয়, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন এবং হামলার পরিকল্পনা দেন।
এর মধ্যে কলকাতা থেকে গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, লন্ডন থেকে আব্দুর রহমান, শরীয়তপুর থেকে ইকবাল হোসেন অপু, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল আলম কাজলসহ অনেকে সমন্বয় করেন।
নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনও কলকাতা থেকে ফেসবুক লাইভে এসে সরাসরি হামলার নির্দেশনা দেন।
নারী সংগঠনেও সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখেন গোপালগঞ্জ মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ইয়াসমিন আলম, যিনি শফিকুল আলম কাজলের স্ত্রী। ঘটনার পর তাকে পুলিশ আটক করে।
১ জুলাই থেকে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে এনসিপি। ইতোমধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় কর্মসূচি পালন করে দলটি। মাসব্যাপী এ কর্মসূচির অংশ হিসাবে বুধবার ছিল গোপালগঞ্জে পদযাত্রা ও সমাবেশের আয়োজন।
আগের দিন মঙ্গলবার দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ কর্মসূচিকে ‘১৬ জুলাই: মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি হিসাবে ঘোষণা করা হয়। গোপালগঞ্জে কর্মসূচি পালন শেষে এনসিপির নেতাকর্মীদের শরীয়তপুরের জাজিরায় আরেকটি কর্মসূচি পালনের কথা ছিল।
এদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন রমজান কাজী (১৯) হরিণাহাটি, কোটালীপাড়া, সোহেল রানা (৩৫ শানাপাড়া, দীপ্ত সাহা (৩০) উদয়ন রোড, ইমন তালুকদার (২৪) ভেড়ার বাজার, রমজান মুন্সী (৩২) স্থানীয় বাসিন্দা।
এ ঘটনায় ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৪০০ জন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন থানার পুলিশ পরিদর্শক আহম্মেদ আলী। এখন পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৪৫ জনকে আটক হয়েছে।