ঢাকা রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫

৫ সাংবাদিককে ‘হত্যার পরিকল্পনা’, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ফাঁস

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৫, ০৭:১৪ এএম
সাধারণ ডায়েরির কপি ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের লোগো। ছবি- সংগৃহীত

এবার গাজীপুরের মতো ফেনীর পাঁচ সাংবাদিকের ওপর হামলার পরিকল্পনার অভিযোগ উঠেছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ‘একতাই শক্তি’ নামের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এ হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ফেনী সংবাদদাতা ও দৈনিক ফেনীর সময়’র সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ফেনী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামছুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘একতাই শক্তি’ নামের ছাত্রলীগ-যুবলীগের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেখানে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফেনীর পাঁচ সাংবাদিককে টার্গেট করা হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ছাড়াও যমুনা টিভির স্টাফ রিপোর্টার আরিফুর রহমান, দৈনিক ফেনীর সময়’র প্রধান প্রতিবেদক আরিফ আজম, এখন টিভির প্রতিনিধি সোলায়মান হাজারী ডালিম ও এনটিভি অনলাইন রিপোর্টার জাহিদুল আলম রাজনও রয়েছেন।

সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়, শুক্রবার দিবাগত রাতে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি যে, ‘একতাই শক্তি’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কতিপয় ব্যক্তি কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছে। ওই গ্রুপে সাইফ উদ্দিন লিখেছেন, আমাদের উচিত গাজীপুরের মতো মিডিয়ার ট্রায়ালটার চান্স নেওয়া। এই চান্সে ‘আমাদের ফেনীর সময়’-এর শাহাদাত, আরিফ আজম, আরিফ, রাজন—এদের যে কারোর বিরুদ্ধে চান্সটা নেওয়া দরকার। এখন বিএসএল নিয়ে আসবে না, সব বিএনপির উপর যাবে।

সাহেদ অভি নামে আরেকজন লেখেন, এই আরিফ আজম ও শাহাদাত হোসেনদের পা চাটতো আমাদের নেতারা। এই আরিফ আজম আমাদের ফেনী কলেজের সামনে নোবেলদের মিছিলের ছবি প্রকাশ করেছে। সবাইকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করছে। তার ও সম্পাদক শাহাদাত-এর ১০ বছর পরে হলেও ছাড় নেই। মাটির যত নিচে থাকুক তুলে নিয়ে আসব, তার সাথে এনটিভি-এর রাজন, যমুনা টিভির আরিফ—এদের সবকয়টিকে দেখব।

এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যারা আলোচলায় অংশ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন—নিষিদ্ধ ঘোষিত পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাহেদ আকবর অভি, ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাইফ উদ্দিন মানিক, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত তুষার, সহ-সভাপতি সরোয়ার রনি, ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নূর করিম জাবেদ, সহ-সভাপতি রায়হান হাবিব শাকিল, শওকত কিরণ, মো. হাসান, ফেনী পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী নিজাম উদ্দিন শুভ, ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল আহাম্মদ তপুসহ আরও ২০ থেকে ২৫ জন।

গ্রুপের অ্যাডমিনরা হলেন—জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল আহাম্মদ তপু, সাধারণ সম্পাদক নুর করিম জাবেদ, সহ-সভাপতি সাহেদ আকবর অভি, আশিক হায়দার রাজন হাজারী, রনি চন্দ্র দাস, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত তুষার, কলেজ ছাত্রলীগের সাইফ উদ্দিন মানিক। এই গ্রুপের অন্যান্যদের মধ্যে শওকত কিরণ, জিমান শুভ, এ এইচ তুষার, জোবায়েদ আকাশ, তৌফিক চৌধুরী, হৃদয় ভূঁঞা, আকাশ আহাম্মেদ, মো: রাকিব, দিলারা সুলতানা মিলা, নিজাম পাটোয়ারী, নাছির উদ্দিন মিয়াজী, ইকবাল হোসেন বাবলু, লিও চৌধুরী, মো: রোমান, রবিউল হক ভূঁঞা রবিন, এখলাছ উদ্দিন খন্দকার, রাকিব অর্ণব, ইয়াছিন আরাফাত রাজু, রায়হান হাবিব খাঁন শাকিল, রাকিব আহাম্মদ তাহান, মামুন আড্ডা, মো: রিয়াদ হোসেন রিয়াদের নাম জানা গেছে।

হামলার পরিকল্পনা ফাঁসের পর জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন ফেনীর প্রবীণ সাংবাদিক একেএম আবদুর রহীম বলেন। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

ফেনী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি তারা গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে আগেই জেনেছেন। সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর। যে তথ্যগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলো সাইবার সেলের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যারা যুক্ত রয়েছে তাদের প্রায় সবাই ফেনীতে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় পলাতক আসামি।