ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল পুলিশ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ১২:০৭ পিএম
ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসাইন হত্যা। ছবি - সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে পুলিশ। বংশাল থানা পুলিশ জানায়, এ হত্যাকাণ্ডটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং এর পেছনে মূল ভূমিকা রাখেন তার ছাত্রী বর্ষা ও বর্ষার প্রেমিক মাহীর রহমান।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকালে বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে বর্ষা ও মাহীর। ঘটনার দিন মাহীরের সঙ্গে আরও দুই বন্ধু ছিল। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য তারা নতুন দুটি সুইচ গিয়ার ছুরি কেনে।

ওসি রফিকুল বলেন, বর্ষা ও মাহীরের মধ্যে নয় বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবে মাঝখানে বর্ষা জোবায়েদের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মাহীরকে জানায়, সে জোবায়েদকে পছন্দ করে। এতে মাহীর ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। কিছুদিন পর বর্ষা আবার মাহীরকে জানায় যে, সে আর জোবায়েদকে ভালোবাসে না। এই জটিল সম্পর্ক ও বিরোধ থেকেই হত্যার পরিকল্পনা তৈরি হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বর্ষা হত্যার পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করলেও, পরে মাহীর ও বর্ষাকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা পুরো পরিকল্পনার সত্যতা স্বীকার করে।

নিহত জোবায়েদ হোসাইন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সভাপতি এবং শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন। গত এক বছর ধরে তিনি পুরান ঢাকার আরমানিটোলার ১৫, নূরবক্স লেনের রওশান ভিলা নামে বাড়িতে বর্ষা নামের এক ছাত্রীকে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও বায়োলজি পড়াতেন। বর্ষার বাবার নাম গিয়াসউদ্দিন।

গত রোববার (১৯ অক্টোবর) বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে বর্ষার বাসার তিনতলায় ওঠার সময় সিঁড়িতেই ছুরিকাঘাতে খুন হন জোবায়েদ। এ সময় সিঁড়ির নিচতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত রক্ত ছড়িয়ে ছিল। পরে তিনতলার সিঁড়িতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় জোবায়েদকে।

হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ বর্ষাসহ মোট চারজনকে আটক করেছে। বর্ষাকে রোববার রাত ১১টার দিকে তার আরমানিটোলার বাসা থেকে হেফাজতে নেওয়া হয়। রাত ১০টা ৫০ মিনিটে জোবায়েদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরদিন সোমবার তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। তারা বংশাল থানার সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে এবং তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করে রাখে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পুলিশ দ্রুত অভিযানে নামে এবং জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার বিস্তারিত বেরিয়ে আসে।

এ ঘটনায় ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, ‘মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’