ছাত্ররাজনীতি নিয়ে সংঘর্ষের পর পাঁচ মাস পার হলেও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) অচলাবস্থা কাটেনি। উপাচার্য পদ শূন্য থাকায় সংকট আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী সেশনজট নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষাজীবন সচল করার প্রত্যাশায় দীর্ঘ পাঁচ মাস পর শ্রেণিকক্ষে ফিরেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
রোববার (২০ জুলাই) পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২১-২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত হন।
ফেসবুক পেজ ‘রক্তাক্ত কুয়েট’-এ শনিবার এক পোস্টে বলা হয়- ‘সব জরা-জীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে নেতিবাচকতাকে রেড কার্ড দেখিয়ে আমরা সবাই আগামীকাল ক্লাসে ফিরি। শিক্ষকেরা আমাদের মঙ্গল কামনা করেছেন, তারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন না। তাই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে ক্লাসে ফেরার সময় এসেছে।’
শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষকরা ক্লাস শুরুর ব্যাপারে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। তারা বলেছেন, ভালো পরিবেশ তৈরি হলে ক্লাস নেওয়া সম্ভব। শিক্ষকেরা আমাদের উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন এবং আশ্বস্ত করেছেন।’
শিক্ষা কার্যক্রম সচল করতে অভিভাবকরাও সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। ১৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) গার্ডিয়ান ফোরাম ইউজিসি চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে।
রোববার কুয়েট প্রশাসনিক ভবনের সামনে অভিভাবকরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করার কথা রয়েছে।
২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী আশির মুনতাকিম ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা বাধ্য হয়ে ক্লাসে এসেছি। আমাদের পাঁচ মাস নষ্ট হয়ে গেছে। ৪ মে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত ছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে আর কোনো সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত হয়নি যে ক্লাস বন্ধ থাকবে। শিক্ষকদের কোনো আইনি বাধা নেই, তাহলে তারা কেন আসছেন না তা আমরা বুঝতে পারছি না।’
কুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, ‘উপাচার্য ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। ক্লাস নেওয়া সম্ভব হলেও পরবর্তীকালে বিশৃঙ্খলা হলে সেটার দায় কে নেবে?’
প্রসঙ্গত, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে কুয়েটে সংঘর্ষ হয়। এতে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরে আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য অপসারণ করে সরকার।
১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়। ২২ মে শিক্ষকদের বিরোধিতার মুখে তিনি পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়, কিন্তু এখনো নিয়োগ কার্যক্রম অগ্রসর হয়নি।
১৫ জুলাই পর্যন্ত ইউজিসির পক্ষ থেকে কুয়েটের বেতন-ভাতা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অস্থায়ীভাবে আর্থিক দায়িত্ব দেওয়া হয় মো. জামিনুর রহমানকে।
তবে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে ইতিবাচক বার্তা দিলেও প্রশাসনিক অচলাবস্থায় শিক্ষকদের অংশগ্রহণ না থাকায় শিক্ষাজীবন পুরোপুরি সচল হয়নি।
উপাচার্য নিয়োগ ও প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা না এলে এই সংকটের দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।