৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলে ১ হাজার ৬৯০ জনকে বিভিন্ন ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।
তবে এ তালিকায় থাকা অনেকেই পূর্ববর্তী বিসিএসে একই ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ এ ধরনের রিপিট ক্যাডারের সংখ্যা অন্তত ৮০০ জন। যদিও পিএসসি বলছে এই সংখ্যা ৪২৪ জন।
পিএসপির এ তথ্য ঠিক থাকলেও গেজেট প্রকাশের পর এ বিসিএসে ৪২৪টি পদ শূন্যই থেকে যাবে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীরা।
তারা বলছেন, দীর্ঘ চার বছরের অপেক্ষার পর এমন ফলাফল অনৈতিক ও হতাশাজনক। যাদের আগেই একই ক্যাডারে নিয়োগ হয়েছে, তাদের বাদ দিয়ে অপেক্ষমাণ উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে নতুন করে সুপারিশ প্রকাশ করার দাবি তুলেছেন তারা।
চাকরিপ্রার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে, পিএসসি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিয়েছে এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিধি সংশোধনের জন্য একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
৯ জুলাই পাঠানো এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যেসব প্রার্থী আগের মতো একই ক্যাডারে পুনঃসুপারিশ পেয়েছেন এবং সেই পদে যোগদানের আগ্রহ নেই, তাদের বাদ দিয়ে অপেক্ষমাণদের মধ্য থেকে মেধাক্রম অনুযায়ী নতুন তালিকা তৈরি করা যেতে পারে।
প্রস্তাবিত বিধি সংশোধনে কী আছে ?
পিএসসির প্রস্তাব অনুযায়ী:
- আগের মতো একই ক্যাডারে মনোনীত হলেও যাদের যোগদানের আগ্রহ নেই, তাদের কমিশন বাদ দিতে পারবে।
- তাদের জায়গায় অপেক্ষমাণদের মধ্য থেকে নতুন প্রার্থী মেধাক্রম অনুসারে মনোনীত হবে।
- তবে, এই সম্পূরক ফলাফল আগের ফলাফলে মনোনীত প্রার্থীদের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আনবে না।
- গেজেট প্রকাশের আগেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে।
পিএসসি আরও জানিয়েছে, রিপিট ক্যাডারের কারণে প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদ ব্যবস্থাপনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে এ সমস্যা রোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য বিধি সংশোধনকে জরুরি হিসেবে চিহ্নিত করেছে কমিশন।
রিপিট প্রার্থীদের তথ্য যাচাই চলছে
গুগল ফর্মের মাধ্যমে ১৪ থেকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে ৪৪তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্তদের আগের নিয়োগসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে পিএসসি। যাচাই–বাছাই শেষে ৪২৪ জনকে রিপিট ক্যাডার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যদিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
পদ বাড়ানোর দাবিও জোরালো হচ্ছে
অন্যদিকে বিসিএস উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের আরেকটি বড় দাবি হলো, পদসংখ্যা বাড়ানো। তারা বলছেন, ৩৮, ৪০, ৪১ ও ৪৩তম বিসিএসে ক্যাডার সংখ্যা বাড়ানো হলেও এবার উল্টো অনেক পদ শূন্য রেখেই ফল প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে অনেক মেধাবী প্রার্থী নন–ক্যাডার তালিকায় চলে গেছেন।
এই দাবিতে চাকরিপ্রার্থীরা রাজু ভাস্কর্যে অনশন, স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। তাঁদের দাবি, ৪৪তম বিসিএসে অন্তত ৪০০ পদ বাড়ানো হোক।
পিএসসি ও জনপ্রশাসন কী বলছে?
পিএসসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা বিধি মেনেই ফল প্রকাশ করেছি। তবে রিপিট ক্যাডার বিষয়ে প্রার্থীদের উদ্বেগের কথা বিবেচনায় নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এবং বিধি সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ‘পদসংখ্যা নির্ধারণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো সরকারকে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করব।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পিএসসির পাঠানো প্রস্তাব সতর্কভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে কোনো প্রশাসনিক জটিলতা না হয়।