ঢাকা শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫

রাকসু নির্বাচনে প্রার্থী-সমর্থকরা যা করতে পারবেন, যা পারবেন না

মাইনুল ইসলাম রাজু, রাবি
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ০৯:২৪ পিএম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ইউনিট। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের আচরণবিধি প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত আচরণবিধিতে প্রার্থীদের ডোপ টেস্টের বাধ্যবাধকতা, প্রচারণার বিধান, ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদা আলাদা হলে প্রচারণার নিয়মাবলি ও আচরণবিধি ভঙ্গ করলে শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে রাকসুর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন স্বাক্ষরিত নির্বাচনি আচরণবিধিটি প্রকাশিত হয়েছে।

মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমা দেওয়া এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহার সম্পর্কে আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, প্রার্থী নিজে ও তার মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। এ সময় কোনো প্রকার মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। প্রার্থী সর্বোচ্চ ৫ জন সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন।

তবে, প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে প্রার্থীকে স্বশরীরে উপস্থিত হতে হবে। কোনো প্রার্থীর ডোপ টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ হলে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে।

নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার নিয়মাবলীতে বলা হয়েছে, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে ভোট গ্রহণের ২৪ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারবে। নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থী ও ভোটার ব্যতীত অন্য কেউ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচারণা চালাতে পারবে না।

নির্বাচনী প্রচারণায় সাদা-কালো ৬০ (ষাট) সেমি × ৪৫ সেমি পোস্টার ব্যবহার করা যাবে। ভবনের দেয়ালে লেখনী ও পোস্টার লাগানো যাবে না। কোনো প্রার্থীকে নির্বাচনী প্রচারণা কাজে কোনো বাধা দেওয়া যাবে না।

প্রার্থী বা তার পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী কেউকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, বলপ্রয়োগ ও ভোটদানে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না; হল এবং একাডেমিক ভবনের অভ্যন্তরে মিছিল/সমাবেশ করা যাবে না; নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো প্রকার মিডিয়ায় মানহানিকর আচরণ, অশালীন উক্তি ও উসকানিমূলক কোনো কথা বলা যাবে না।

এ ছাড়াও প্রার্থীদের প্রচারণার ক্ষেত্রে নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশ্যে ছাত্রদের আবাসিক হলে ছাত্রী এবং ছাত্রীদের আবাসিক হলে ছাত্র, সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে পরিচিতি সভায় প্রবেশ করতে পারবে। ক্যাম্পাসে কোনো সভা করতে হলে সভার স্থান ও সময় সম্পর্কে প্রক্টরকে জানাতে হবে। নির্বাচনি কার্যক্রম চলাকালে সকলকে পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। বহিরাগত কেউ আবাসিক হলে অবস্থান করতে পারবে না।

এই আদেশ অমান্য করলে তৎক্ষণাৎ তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ ও শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করার চেষ্টা করলে এবং নির্বাচন নীতিমালা অনুযায়ী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক শাস্তির আওতায় আনা হবে। প্রার্থী পরিচিতি সভা ছাড়া অন্য কোনো সভায় মাইক ব্যবহার করা যাবে না।

নির্বাচনে যানবাহন ব্যবহার

আচরণবিধি অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী নির্বাচনী কার্যক্রমে কোনো ধরনের যানবাহন, মোটরসাইকেল, রিকশা, ঘোড়ার গাড়ি, হাতি, ব্যান্ড পার্টি ইত্যাদি নিয়ে কোনোরূপ শোভাযাত্রা, শোডাউন বা মিছিল করতে পারবে না। নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে বা ভোটকেন্দ্র হতে ভোটারদের আনা-নেওয়ার জন্য কোনো প্রকার যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না।

নির্বাচনের দিন শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রধান রিটার্নিং অফিসার/প্রক্টর কর্তৃক অনুমোদিত গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। নির্বাচনী দিন প্রার্থী, ভোটার ও শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ যানবাহন ব্যবহার করতে পারবে।

ভোটকেন্দ্রে প্রবেশাধিকার

ভোটার ও প্রার্থীদের ভোটকেন্দ্রে কিছু নিয়মাবলি মানতে হবে। তা হলো, ভোটাররা নিজ নিজ হলের বৈধ পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করবে। নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের প্রধান রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক অনুমোদন নিতে হবে এবং পরিচয়পত্র নিতে হবে। বুথের অভ্যন্তরে কোনোভাবেই এ ধরনের কোনো ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না বা ছবি-ভিডিও করা যাবে না।

ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে গণমাধ্যমকর্মীরা ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে ভোটকেন্দ্রের বুথসমূহে প্রবেশ করতে পারবেন না। ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের লাইভ সম্প্রচারসহ ভোটকার্য বাধাগ্রস্ত হতে পারে এমন কোনো কাজ করা যাবে না।

সার্বিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা

নির্বাচনের দিনে ভোটার এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি ব্যতীত ক্যাম্পাসে অন্য সকলের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে বলে আচরণবিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্বাচনী প্রচারণা ও নির্বাচন চলাকালে বিস্ফোরক, অস্ত্র (লাঠিসোটা, রড, হকিস্টিক, ছুরি-কাঁচি ইত্যাদি) ও আগ্নেয়াস্ত্র বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বা অনুমোদিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ কোনো প্রকার অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবে না।

প্রার্থীরা ভোটকেন্দ্রের ৫০ মিটারের বাইরে ভোটারদের স্লিপ প্রদান করতে পারবেন।

নির্বাচনবিধি লঙ্ঘনে শাস্তি

নির্বাচনী আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তি, তদন্তের মাধ্যমে এবং স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কোনো প্রার্থী বা তার সমর্থক নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার অথবা রাষ্ট্রীয়/বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সকল দণ্ডে দণ্ডিত হবে।