বিদেশে নির্মিত সব চলচ্চিত্রের ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ড ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, শুল্ক বসানোর পর সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো যাবে। মে মাসে দেওয়া তার হুমকিরই পুনরাবৃত্তি এটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে হলিউডের দীর্ঘদিনের বৈশ্বিক ব্যবসায়িক মডেল পুরোপুরি পাল্টে যেতে পারে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ট্রুথ সোশ্যাল দেওয়া পোস্টে এই ঘোষণা দেন ট্রাম্প।
রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্পের পদক্ষেপ সাংস্কৃতিক শিল্পে সুরক্ষাবাদী নীতির প্রসার ঘটাবে। এতে অনিশ্চয়তায় পড়বে মার্কিন স্টুডিওগুলো, যাদের আয় নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বক্স অফিস এবং আন্তঃসীমান্ত সহ-প্রযোজনার ওপর।
ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমাদের সিনেমা তৈরির ব্যবসা বিদেশি দেশগুলো চুরি করেছে, ঠিক যেমন শিশুর কাছ থেকে মিষ্টি কেড়ে নেওয়া হয়।
তবে তিনি কোন আইনি ক্ষমতা ব্যবহার করে এই শুল্ক আরোপ করবেন, তা স্পষ্ট নয়। বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়েও হোয়াইট হাউস কোনো মন্তব্য করেনি।
রয়টার্সের প্রশ্নে তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়নি শীর্ষ স্টুডিও ওয়ার্নার ব্রোস ডিসকভারি, প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্স এবং নেটফ্লিক্স। কমকাস্ট সরাসরি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।
বিশ্লেষক পাওলো পেসকাটোর সতর্ক করে বলেছেন, ‘এতে প্রশ্নই বেশি তৈরি হয়েছে, উত্তর কম। খরচ বাড়বে, আর শেষ পর্যন্ত এর চাপ ভোক্তাদের ওপরই পড়বে।’
চলচ্চিত্রে শুল্ক বসানোর ধারণা প্রথম দেন ট্রাম্প গত মে মাসে। কিন্তু বিস্তারিত দেননি। ফলে বিনোদন জগতে ধোঁয়াশা থেকেই যায় যে, এটি কি নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, নাকি সব আমদানি চলচ্চিত্রের জন্য?
ঘোষণার পর প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্সের শেয়ার ২.১ শতাংশ এবং ওয়ার্নার ব্রোস ডিসকভারি শেয়ার ১.৩ শতাংশ কমে যায়।
স্টুডিও নির্বাহীরা জানিয়েছেন, আধুনিক চলচ্চিত্রের শুটিং, অর্থায়ন, পোস্ট-প্রোডাকশন ও ভিজ্যুয়াল এফেক্ট প্রায়শই একাধিক দেশে ছড়িয়ে থাকে। তাই একটি সিনেমায় শুল্ক কীভাবে বসানো হবে—সে ব্যাপারে তারা ‘অস্থির’।
হলিউড এখন ব্যাপকভাবে বিদেশি প্রযোজনা কেন্দ্রে নির্ভরশীল। কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার কর ছাড়ে বড় বাজেটের সুপারহিরো ছবি থেকে শুরু করে স্ট্রিমিং ড্রামা পর্যন্ত শুটিং চলে সেখানেই।
এছাড়া এশিয়া ও ইউরোপে স্থানীয় স্টুডিওগুলোর সঙ্গে সহ-প্রযোজনাও এখন সাধারণ চিত্র। এসব দেশে তারা পায় অর্থায়ন, বাজারে প্রবেশের সুযোগ এবং বিতরণ নেটওয়ার্ক।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করেছেন, এই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের ভিজ্যুয়াল এফেক্ট শিল্পী থেকে শুরু করে প্রযোজনা কর্মীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিদেশে শুটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মার্কিন কর্মীর কাজও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।