২০২৬ সালের শুরু থেকে ক্রোয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীদের জন্য একাধিক নতুন নিয়ম কার্যকর হতে যাচ্ছে। সরকারের নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুযায়ী, ওয়ার্ক পারমিট, চাকরি পরিবর্তন, ভাষা দক্ষতা ও রেসিডেন্সিসংক্রান্ত নিয়মে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নতুন চাকরির অনুমতি পাওয়ার পর বিদেশি কর্মীদের তিন মাসের মধ্যে ক্রোয়েশিয়ান ভাষা শেখার শর্ত যোগ করা হয়েছে। একইসঙ্গে নতুন কার্ডের জন্য A1.1 স্তরের ভাষা সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
একই কোম্পানিতে টানা ছয় মাস কাজ করলে সহজেই চাকরি পরিবর্তন করা যাবে। শুধু নতুন কর্মচুক্তি এবং অ্যাকোমোডেশনের কাগজ দেখাতে হবে। তিন বছরের টিআরসি কার্ড পাওয়া কর্মীরা পার্ট-টাইম চাকরিও করতে পারবেন। বেকারত্ব ভাতা পেতে হলে কর কাগজপত্র, বিমার কাগজ এবং শেষ বেতনপত্র জমা দিতে হবে। যাদের ভাষা সার্টিফিকেট থাকবে তারা ভবিষ্যতে আরও সুবিধা ও সুযোগ পাবেন।
দেশটির সরকার জানিয়েছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির পরেও আরও নতুন পরিবর্তন আসতে পারে।
এদিকে পূর্বে যেখানে বিদেশি কর্মীরা এক বছরের টিআরসি পেতেন, এখন তা তিন বছরের জন্য কার্যকর করা হয়েছে। প্রবাসী পল্টন চন্দ্র দাস জানান, এক বছরের টিআরসি-তে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হলেও তিন বছরের কার্ডে সুবিধা বেড়েছে।
অন্য প্রবাসী জুয়েল বলেন, তিন বছরের টিআরসি বিদেশি কর্মীদের জন্য একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।
তবে এ বছর ক্রোয়েশিয়ায় ওয়ার্ক পারমিটের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ২০২৪ সালের প্রথম দশ মাসে গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৮ হাজার কম পারমিট দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ খাতেই সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে- এই খাতে একাই ১৮ হাজার ৫০০ পারমিট কমেছে। বাতিল আবেদনসহ সব মিলিয়ে এই বছর প্রায় ৪০ হাজার কম পারমিট অনুমোদন করা হয়েছে। পর্যটন খাতেও বিদেশি কর্মী নিয়োগ কমেছে।
নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মালিক সাসা পেরকো জানান, যোগ্যতার অভাবে অনেক বিদেশি কর্মী প্রয়োজনীয় মান অর্জন করতে পারে না, যার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিরিক্ত প্রশিক্ষণে খরচ করতে হয়।
অন্যদিকে ভাষা দক্ষতা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন আইনের প্রস্তাব অনুযায়ী, ওয়ার্ক পারমিট নবায়নের জন্য এক বছর পর A1.1 স্তরে ভাষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এ ছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের অস্থায়ী রেসিডেন্সি এক বছর থেকে তিন বছর করার পরিকল্পনা রয়েছে।
যেখানে নির্মাণ খাতে চাহিদা কমছে, সেখানে স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ৫ হাজার নার্সের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। রোমানিয়া ও তৃতীয় দেশ থেকে নার্স নিয়োগ চলছে। তবে স্বাস্থ্যসেবায় নিরাপদভাবে কাজ করতে ভাষা দক্ষতা অত্যন্ত প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন জাজেদনো ইউনিয়নের সান্দ্রা আলিচ। কম বেতন ও কঠিন কর্মপরিবেশের কারণে দেশীয় নার্সরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশি কর্মীদের জন্যও পরিস্থিতি অনিশ্চিত। গত বছরের জানুয়ারির শেষ থেকে বাংলাদেশ থেকে নতুন ভিসা প্রসেসিং বন্ধ রয়েছে। এখনো পর্যন্ত নতুন কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি, যা বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
সরকারের দাবি, নতুন আইন শ্রমবাজারে শৃঙ্খলা ফেরাবে, নিয়োগ সংস্থাগুলোর তদারকি বাড়াবে এবং বিদেশি কর্মীদের সঠিক তথ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

