ময়মনসিংহের ত্রিশালের চেয়ারম্যানবাড়ি মসজিদ এলাকায় আজ সকালে বাসের ধাক্কায় আহত হয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের প্রভাষক মো. মাহিদুল ইসলাম। সকালে রিকশায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সময় ‘জননী ট্রান্সপোর্ট’ নামের একটি বাস রিকশাকে মুখোমুখি ধাক্কা দিলে তিনি রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে যান এবং আহত হন। এ সময় রিকশাচালকও গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। দুর্ঘটনার পরপরই বাসচালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে বাসটি জব্দ করে ত্রিশাল থানায় নিয়ে যায়।
রোববার (২ নভেম্বর) শিক্ষক আহতের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুর ৩টার দিকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলটি সোশ্যাল সায়েন্স ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে সেন্ট্রাল লাইব্রেরি সংলগ্ন রাস্তা, নজরুল ভাস্কর্য, পুরাতন কলা ভবন ও প্রশাসনিক ভবন প্রদক্ষিণ করে দ্বিতীয় গেটের সামনে অবস্থান নেয় এবং সড়ক অবরোধ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘শিক্ষক আহত, জাতি লজ্জিত’, ‘আমার শিক্ষক আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘নিরাপদ সড়ক চাই, শিক্ষক আহতের বিচার চাই’—এমন স্লোগান দেন।
আহত শিক্ষক মাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে আমাকে বহনকারী রিকশা যখন চেয়ারম্যানবাড়ি মসজিদ মোড় পার হচ্ছিল, তখন অপরপ্রান্ত থেকে আসা জননী ট্রান্সপোর্টের একটি বাস রিকশাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় রিকশাচালক লাফ দেন এবং আমি ছিটকে পড়ে যাই। রিকশা দুমড়েমুচড়ে যায়। আমার ডান হাত ও ডান কাঁধে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছি। ডান হাত অনেকটা ফুলে গেছে, বুকে প্রচণ্ড ব্যথা এবং হাঁটুর জায়গায় ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। সাময়িকভাবে আমাকে পেইনকিলার ইনজেকশন ও টিটেনাস ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে। আমি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে এক্স-রে করাব। তারপর বোঝা যাবে ভেতরে হাড়ের অবস্থা। প্রয়োজনে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসা নেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাসচালক আনুমানিক ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার বা তার বেশি গতিতে ওই সরু রাস্তায় বাস চালাচ্ছিল। দুর্ঘটনার পর চালক পালিয়ে যায়। উপস্থিত জনতা বাসটি আটক করে। এ সময় রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের রিয়াজুল স্যার। তিনি এসে আমাকে সাহায্য করেন। পরে প্রক্টর স্যারকে ফোন দিলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়িকে জানান এবং আমি ৯৯৯-এ কল দিই। তৎক্ষণাৎ পুলিশ এসে বাসটি জব্দ করে নিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও সার্বক্ষণিক আমার খোঁজখবর নিচ্ছেন।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বাসটি আটকানোর পর ড্রাইভার পালালেও বাসমালিক এসে প্রথমে বাস ছাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন। আমি রাজি না হলে তিনি আমার বাড়ির ঠিকানা জানতে চান—সম্ভবত চাপ প্রয়োগ বা স্থানীয় প্রভাব খাটানোর উদ্দেশ্যে।’
তিনি সড়কের প্রতিটি বাঁকে স্পিড ব্রেকার স্থাপনের দাবি জানান।
বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্বদানকারী স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বাসটি বেপরোয়া গতিতে রিকশায় ধাক্কা দেয়। স্যার গুরুতরভাবে আহত হন। কিছুদিন আগেও একই সড়কে আমাদের এক শিক্ষার্থী দুর্ঘটনার শিকার হন এবং তার হাত ভেঙে যায়। আজ আমরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে দাঁড়িয়েছি।’
চার দফা দাবি জানিয়েছি:
১) বাসচালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স (যদি থাকে) বাতিল করতে হবে এবং ড্রাইভারকে দ্রুত পুলিশ হেফাজতে নিতে হবে।
২) বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তায় ঘণ্টায় ২০ কিমি’র বেশি গতিতে গাড়ি চলতে পারবে না।
৩) রিকশাচালককে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক লাখ টাকা প্রদান করতে হবে।
৪) বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সকল সড়কে স্পিড ব্রেকার স্থাপন করতে হবে।
তিনি দাবি পূরণে প্রশাসনের ঐক্যমতের আহ্বান জানান।
একই বিভাগের নবীন (১৯তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী সামিয়া সুলতানা সাবনাম বলেন, ‘আজ আমাদের শিক্ষক আহত হয়েছেন—আগামীকাল আমরা আহত হতে পারি। সড়কে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? বহুদিন ধরে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবি জানাচ্ছে। আমরা দ্রুততম সময়ে শিক্ষক আহতের বিচার এবং সড়ক নিরাপত্তা চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান রনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সড়কগুলো ভাঙাচোরা। যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। কোথাও স্পিড ব্রেকার নেই। গাড়ি যে যার মতো অতিরিক্ত গতিতে চালায়। রাতে এসব সড়কে আলোকসজ্জারও কোনো ব্যবস্থা নেই। রোডলাইট নষ্ট। এগুলো দ্রুততম সময়ে মেরামত করতে হবে। একই সঙ্গে অভিযুক্ত চালককে গ্রেপ্তার করতে হবে।’
অভিযুক্ত বাসচালককে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় না আনলে এবং চার দফা দাবি না মানলে আগামী ৬ নভেম্বর ময়মনসিংহ–ঢাকা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়ে আজকের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন