ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য আর নেই। এক বিভীষিকাময় রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন এই তরুণ। সম্ভাবনাময় এই শিক্ষার্থীর করুণ মৃত্যু স্তব্ধ করে দিয়েছে ক্যাম্পাসের প্রাণচাঞ্চল্য। ঢামেকের প্রতিটি করিডোরে এখন শুধুই কান্না, আর্তনাদ আর শোকের ভার।
সাম্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। পাশাপাশি স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবেও সক্রিয় ছিলেন।
সহপাঠীদের বর্ণনায় জানা যায়, মঙ্গলবার (১৩ মে) রাত ১২টার দিকে সাম্য, বায়েজিদ ও রাফি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কালী মন্দির সংলগ্ন একটি ক্যান্টিন থেকে বের হচ্ছিলেন। তখনই ৮-১০ জন দুর্বৃত্ত হঠাৎ তাদের ঘিরে ফেলে। কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই হামলা শুরু হয়। ধারালো অস্ত্রের একের পর এক আঘাতে সাম্য লুটিয়ে পড়েন। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে নিস্তেজ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত ঢামেক হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু চিকিৎসকেরা তখনই জানিয়ে দেন-সব শেষ।
ঘটনার সময় আহত সহপাঠী বায়েজিদ বলেন, আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই হামলা শুরু হয়। সাম্যকে একাধিকবার ছুরি মারা হয়।
আরেক বন্ধু রাফি জানান, ধাক্কা লাগার মতো সামান্য একটি বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ৭-৮ জন ব্যক্তি অতর্কিতে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
সাম্যের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে মধ্যরাতে ঢামেক হাসপাতালে ছুটে আসেন তার সহপাঠী, সিনিয়র-জুনিয়র, শিক্ষক ও ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। কেউ মেঝেতে গড়িয়ে কান্না করছেন, কেউ নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে শূন্য চোখে তাকিয়ে আছেন সাম্যের নিথর দেহের দিকে।
হাসপাতালের মর্গে পৌঁছেই ছেলের লাশ জড়িয়ে ধরেন সাম্যের বাবা। কাঁদতে কাঁদতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জড়িয়ে বলেন, আমার ছেলেকে মেরে ফেলল, আপনার কাছে বিচার চাই। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সাম্যের মা। কোনো কথা বলেননি, শুধু নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছিলেন।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, সাম্যর ডান পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
ঢাবির স্যার এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট কাজী মাহফুজুল হক সুপন বলেন, একজন বহিরাগত মোটরসাইকেল চালকের ছুরিকাঘাতে সে মারা যায়। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি বর্তমানে হাসপাতালেই আছি।