বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


কামরুল হাসান কাব্য, বেরোবি

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৫, ০৫:৫৪ পিএম

এ দিন আবু সাঈদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল বেরোবি

কামরুল হাসান কাব্য, বেরোবি

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৫, ০৫:৫৪ পিএম

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও শহিদ আবু সাঈদ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও শহিদ আবু সাঈদ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

আজ ১৬ জুলাই। ঠিক এক বছর আগে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহিদ হয়েছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এ দিন সহপাঠীর রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রংপুর শহরের রাজপথ আর ব্যথায় কেঁপে উঠেছিল তাদের হৃদয়। শুধু সহপাঠী নয়, দেশ ও দেশের বাইরের প্রত্যেকটি মানুষদের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছিল ঘটনাটি।

এ দিন শুরু থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটেছিল

দেশব্যাপী কোটা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও (বেরোবি) ছাত্ররা একটি প্রতিবাদ মিছিলের উদ্যোগ নেয়। তবে মিছিলে বাধা দিতে মাঠে নামে বিশ্ববিদ্যালয় ও রংপুর মহানগরের ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের ক্যাডাররা।

প্রতিবাদ মিছিলটি বিকেলে পার্কের মোড় (বর্তমানে আবু সাঈদ চত্বর) থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, সেখানকার পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় ছাত্ররা সকালের দিকেই ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে শহরের লালবাগ এলাকায় যেতে থাকে। মেসেঞ্জার গ্রুপে ঘোষণা আসে—‘লালবাগ থেকে মিছিল শুরু হবে।’

লালবাগে পৌঁছানোর পর দেখা যায় পুলিশ সেখানে টহল দিচ্ছে এবং ছাত্রদের চেকিং করে অনেককেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে জোরপূর্বক পাঠিয়ে দিচ্ছে। তা সত্ত্বেও কিছু শিক্ষার্থী গোপনে বা বিকল্প রাস্তায় লালবাগ অতিক্রম করে শহরের খামার মোড়ে একত্রিত হয়।

সেখানে দুপুর ১২টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০০–১২০ জন শিক্ষার্থী এবং কারমাইকেল কলেজের কিছু শিক্ষার্থী মিলে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের চারতলা মোড়ে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আরও একটি বড় মিছিল আসে—যেটিতে রংপুর জিলা স্কুল, পুলিশ লাইন, ক্যান্ট পাবলিক, ও রংপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।

দুইটি মিছিল একত্রিত হয়ে বিশাল আকার ধারণ করে—আন্দোলনকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১৪০০–১৫০০ জনে। এতে ছাত্রদের মধ্যে সাহস ও উদ্দীপনার সঞ্চার হয় এবং তারা শ্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যায় পার্কের মোড়ের দিকে।

লালবাগে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা এত বড় মিছিল দেখে সরাসরি বাধা দেয়নি। মিছিলটি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে পৌঁছায় দুপুরের কিছু পরেই। সেখানে দেখা যায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও ডিবি সদস্য মোতায়েন আছে। একইসাথে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ক্যাডাররাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে অবস্থান নেয়।

শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বে থাকা কিছু শিক্ষার্থী পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে গেলেও তাদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ তাদের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করে গেট বন্ধ রাখে।

এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের অধিকার দাবি করে গেট ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করে। তাদের বক্তব্য ছিল—‘নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পুলিশের অনুমতি লাগবে কেন?’

সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা গিয়েছিল

দুপুর ২টা ১২ মিনিটে আন্দোলনকারীরা গেটের সামনে অবস্থান নিলে পুলিশ হঠাৎ গুলি ছোড়ে। শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় আবু সাঈদ নামে এক শিক্ষার্থী সামনে এগিয়ে এলে পুলিশ তাকে ঘিরে ধরে মারধর করে, যেখানে তার হাত উপড়ে যায় এবং রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়।

পুলিশ পরে ক্যাম্পাসে ঢুকে আরও বেশি সংখ্যক ফোর্স নিয়ে অবস্থান নেয়। ২টা ১৫ মিনিটে একজন আন্দোলনকারী মাইকে গুলি না ছোড়ার অনুরোধ জানান।

এক মিনিট পর, শিক্ষার্থীরা গেটের দিকে আবারও তীব্র গতিতে অগ্রসর হলে গেট খুলে যায় এবং পুলিশ পুনরায় গুলি ছোড়ে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী সরে গেলেও আবু সাঈদ নিজ অবস্থানে দুই হাত প্রশস্ত করে দাঁড়িয়ে থাকেন। হঠাৎ ১৪.২ মিটার দূর থেকে এক পুলিশ সদস্য কোনো ধরনের হুঁশিয়ারি ছাড়াই আবু সাঈদের বুকে, পেটে ও মুখে শটগান ছুড়ে। তিনি রক্তাক্ত হয়ে রোড ডিভাইডারের পাশে পড়ে যান।

এক আন্দোলনকারী তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলে আবু সাঈদ সেখানেই লুটিয়ে পড়েন। পরে অন্য আন্দোলনকারীরা তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা মুহূর্তেই দেশে ও দেশের বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনকারীরা আবু সাঈদের লাশসহ গুলিবিদ্ধ আরও শিক্ষার্থীদের নিয়ে মেডিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়মুখী একটি মিছিল বের করে। মিছিলে আবেগ-উত্তেজনা ও শোক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মুহূর্তেই তা সারাদেশে ছড়িয়ে সেদিনের স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি অনেকেই।

সেদিনের ঘটনা নিয়ে যা বলছে শিক্ষক ও সহপাঠীরা

সেসময় উপস্থিত থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক বলেন, ‘১৬ জুলাইয়ের সেদিনের মুহূর্ত এখনো চোখে ভাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লাশের পাশে তাদের সহপাঠীদের আর্তনাদ—এটা ভুলবার মতো নয়। এই স্মৃতি আরও বহু বছর চোখে ভাসবে।’

সে সময় মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী ফারিদ ইসলাম বলেন, ‘এমন মুহূর্ত যেন আর কখনোই না আসে। সহপাঠীকে হারানোর শোক আমাদের এখনো অনেক পীড়া দেয়।

সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পুলিশের গুলিতে আহত হওয়া শিক্ষার্থী তৌহিদুর ইসলাম তুহিন বলেন, ‘এটি এমন একটি তারিখ, যা আমি কখনোই ভুলতে পারব না। সেই বিভীষিকাময় দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো শিউরে উঠে গা। চোখের কোণে অজান্তেই জমে যায় অশ্রু।’

তিনি আরও বলেন, ‘চোখের সামনে ভেসে উঠে আবু সাঈদের মুখখানা, আরও ভেসে উঠে শত শত ছাত্রের আত্মচিৎকার, রংপুর মেডিকেলের ৬ নম্বর ওয়ার্ড, আমার রক্তে ভেজা শার্ট, প্রশাসনের অমানবিক পাশবিকতা।’

Shera Lather
Link copied!