ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডাকসু ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন প্যানেলের ভিপি প্রার্থীরা। অনেকেই একে ‘অশনিসংকেত’ ও ‘পূর্বপরিকল্পিত হামলা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাতে কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅধিকার পরিষদের মিছিলের সময় সংঘর্ষে আহত হন নুর। বর্তমানে তিনি ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে।
কী বলছেন বর্তমান ডাকসু ভিপি প্রার্থীরা
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান এক ফেসবুকে পোস্ট করে লেখেন, ‘ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হওয়া নৃশংস হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। এটা অশনিসংকেত।’
তিনি এ ঘটনায় সরকারের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন এবং ভবিষ্যৎ ছাত্ররাজনীতির জন্য এক অশুভ ইঙ্গিত বলে উল্লেখ করেন।
ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’-এর ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘নুরুল হক নুর জাতীয় নেতা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের সম্মুখ সারির যোদ্ধা। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর এমন ন্যক্কারজনক হামলা প্রমাণ করে আমাদের সংস্কারের অনেক পথ বাকি।’
তার বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ এবং ‘সংস্কারের ব্যর্থতা’।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’-এর প্রার্থী আব্দুল কাদের দুই দফায় ফেসবুকে পোস্ট করে অবস্থান স্পষ্ট করেন।
তিনি প্রথম পোস্টে বলেন, ‘নুর ভাই আমাদের দীর্ঘ লড়াইয়ের সহযোদ্ধা। তার ওপর হামলার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব পক্ষের বিরুদ্ধে স্টাবলিশমেন্ট নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিল।’
অন্য আরেকটি পোস্টে তিনি আরও কঠোর ভাষায় লেখেন, ‘নো মোর মিলিটারি, ব্যারাকে যাও তাড়াতাড়ি।’ এতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান উঠে আসে।
‘প্রতিরোধ পর্ষদ’-এর ভিপি প্রার্থী তাসনিম আফরোজ ইমি এক ফেসবুক পোস্টে প্রশ্ন তোলেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের কার্যকারিতা নিয়ে। তিনি পোস্টে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘পুলিশ ব্রুটালিটির একই, কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বাজে চিত্রই যদি দেখতে হয়, তাহলে সংস্কারের নামে অর্থ খরচ করারও কোনো যৌক্তিকতা নেই।’ তিনি এই হামলাকে গণতান্ত্রিক পরিবেশের ওপর সরাসরি আঘাত বলে উল্লেখ করেন।
হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার পর শিক্ষার্থীরা ঢাবির টিএসসি চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভিপি প্রার্থীরা- ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’-এর বিন ইয়ামিন মোল্লা, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’-এর ইয়াছিন আরাফাত এবং ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’-এর জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ।
সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ প্রার্থী জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ বলেন, ‘আজকে আমরা কী দেখলাম? পুলিশ এবং আর্মি ইনটেনশনালি একজন মানুষকে কীভাবে এভাবে মারতে পারে?... তারা চিনত। তারপরও তার ওপর যে নৃশংস হামলা চালিয়েছে, আমরা বলব, এটা পুরোপুরি পূর্বপরিকল্পিত। সরকারেরও দায় আছে এখানে।’
তার বক্তব্যে হামলার ‘ইচ্ছাকৃততা’ ও ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা’ স্পষ্টভাবে উঠে আসে।
সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ-এর ভিপি প্রার্থী ইয়াছিন আরাফাত বলেন, ‘নুর ভাই ছিলেন আমাদের গণতন্ত্রের প্রতীক। সাহসের প্রতীক। তার ওপর হামলা মানে এটা পুরো জাতির জন্য ন্যক্কারজনক ঘটনা।’ তিনি হামলায় অংশগ্রহণকারী পুলিশ ও সেনা সদস্যদের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
বিন ইয়ামিন মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, ‘এই হামলা উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে।’ তিনি এটিকে ভিন্নমত দমন ও বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, নুরুল হক নুর ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্রার্থীকে হারিয়ে ভিপি নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে গণঅধিকার পরিষদ গঠন করে জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।