রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি ও অ্যাগ্রোনোমি অ্যান্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল আলীম এ ঘোষণা দেন।
এ দিকে পোষ্যকোটা বাতিলের দাবিতে রাত ১০টার দিকে একযোগে ১৭টি হল থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল রাত ১১টার দিকে জুবেরী ভবন থেকে উপাচার্যের বাসভবনে সামনে অবস্থান নেয়। রাত ১২টা ১০ মিনিটে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন শিক্ষার্থীরা।
কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আব্দুল আলীম বলেন, আমাদের সহকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দিনের ওপর হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘জুবেরী ভবন একটা আবাসিক এবং ক্লাব ভবন। সেখানে আমাদের উপ-উপাচার্যসহ কয়েকজন সহকর্মীর ওপর হামলার প্রতিবাদের এবং জড়িতদের শাস্তির দাবি আগামীকাল একদিন পূর্ণদিবস কর্ম বিরতি কর্মসূচি পালন করা হবে। জুবেরি ভবনে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার সাথে জড়িত ছাত্রদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এবং ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে আগামীকাল পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি ঘোষণা করছি। দাবি না মানা হলে ২২ তারিখ থেকে কর্মবিরতি চলমান থাকবে।’
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
অসুস্থ অনশনরত শিক্ষার্থীরা
গতকাল বিকেল থেকে একদল শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে অনশন কর্মসূচিতে বসেন। গত ৩২ ঘন্টা পার হলেও প্রশাসন থেকে তাদেরকে আশানুরূপ কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। এ দিকে শিক্ষকদের কর্মসূচি ঘোষণা পর পর অনশনরত শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে এসে লাথি মেরে ফটক ভাঙতে চেষ্টা করেন। এ সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন অনশনরত আরও দুই শিক্ষার্থী।
তারা হলেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী সজিবুর রহমান। আরেকজনের নাম জানা সম্ভব হয়নি। তাদের দুইজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে।
জুবেরী ভবন ছেড়ে উপাচার্যের বাসভবনে
এ দিকে বিকেল সোয়া ৪টা থেকে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। রাত ১১টা পর্যন্ত সেখানেই শিক্ষার্থীরা অবস্থান করেন। ১১টার পরে সবাই মিলে স্লোগান দিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।
এ সময় কর্মসূচিতে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলের শিক্ষার্থীরা। নারী শিক্ষার্থীদের ৬টি হল থেকে দেখা যায় নারী শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগানে কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন।
এ সময় সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী সুপ্রভা বিনতে রফিক বলেন, ‘আমরা ১৪ জুলাইয়ের মতোই আজ আবার রাজপথে এসেছি। আমরা পোষ্যকোটার বিলুপ্তি নিয়েই ঘরে ফিরব।
এর আগে দুপুর আড়াইটায় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে তারা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে এবং উপ-উপাচার্যের গাড়ি আটকে সেখানে টাকা ছুড়ে মারে।
পরে শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাইন উদ্দিনের বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এতে তিনি সেখানে প্রবেশ করতে পারেননি। পরে তিনি প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে জুবেরী ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়েন। এ সময় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
সার্বিক বিষয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্যের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব ফোনে বলেন, ‘'আমি আগে আমার প্রোভিসি, রেজিস্টার, প্রক্টর কে ফেরত চাই তারপরেই আলোচনায় বসবো। এখন পর্যন্ত আমরা খুবই ধৈর্য্যের পরিচয় দিচ্ছি। কিন্তু এভাবে জিম্মি করে আটকে রেখে সিদ্ধান্ত হতে পারে না। আজকে তারা যা করল এটা কোনভাবেই কাম্য না।’
‘রাকসু হবে কিনা এটা শিক্ষার্থীদের আচরণের ওপর নির্ভর করবে। তবে আমি রাকসু নির্বাচন নিয়ে খুবই সিরিয়াস।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন