সাড়ে তিন দশক পর অনুষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত মোস্তাকুর রহমান জাহিদ এবং জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের সালাহউদ্দিন আম্মার।
আজ শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল পৌনে ১০টার দিকে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নবনির্বাচিত ভিপি ও জিএস উভয়েই শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট বাস্তবায়নে সবাইকে নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের জয়ী করেছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট অনুযায়ী কাজ করব। যারা বিজয়ী হতে পারেননি, তাদের সংখ্যা বেশি। নির্বাচনে একেক পদে অনেক যোগ্য প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। আমরা বিজিতদের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়েই ক্যাম্পাস গড়ে তুলব। আমি আশাবাদী, তারা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা বিজয়ী হয়েছেন, তাদের নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী এই বিজয় উদযাপন করা উচিত। তবে এরচেয়েও বড় কাজ হলো, এই ক্যাম্পাসকে একসঙ্গে গড়ে তোলা।’
জিএস নির্বাচিত সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাকে নির্বাচিত করেছেন, কারণ তারা মনে করেছেন আমি তাদের জন্য কাজ করতে পারব। এ জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সব শিক্ষার্থী ও তাদের পূর্ববর্তী আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের প্রতি, যারা এতদিন শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ক্যাম্পাসে কেউ শত্রু নয়। সবাই আমাদের সহযোদ্ধা। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব, স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়ব এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় একযোগে ভূমিকা রাখব।’
নিজের বিজয় উৎসর্গ করে আম্মার বলেন, ‘এই বিজয় আমি উৎসর্গ করছি আধিপত্যবিরোধী লড়াইয়ে থাকা সব ভাই-বোনকে, নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের, আমার বাবাকে, যিনি কারাবরণ করেছেন এবং আমার মাকে, যিনি সবসময় আমার পাশে ছিলেন।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নে নিজের দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার জানিয়ে আম্মার বলেন, ‘আমার ম্যান্ডেট শিক্ষার্থীরা। তাদের ম্যান্ডেটের বাইরে আমি এক মুহূর্ত থাকব না, ইনশাআল্লাহ। আজ থেকে এক বছর পর দায়িত্ব শেষে আপনারা আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন কেমন লাগছে। যদি আমি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারি, তাহলে সম্মানের সঙ্গে বলতে পারব, আমি এই দায়িত্ব পালন করেছিলাম। আমি যেভাবে আজ সম্মান নিয়ে ঢুকছি, সেভাবেই সম্মান নিয়ে বিদায় নিতে চাই।’
এই সময় পাশে থাকা আম্মারের মায়ের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে যে আদর্শ ও শিক্ষা দিয়ে তাকে মানুষ করেছি, আমি চাই সে সেই আদর্শ ও শিক্ষা পূর্ণ করে শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট অনুযায়ী সামনে এগিয়ে যাক।’
এবারের রাকসু নির্বাচনে ভিপি, এজিএসসহ ২০টি পদে জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। তিনটি পদে জয়ী হয়েছেন ছাত্রদল প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ক্রীড়া সম্পাদক পদে জয় পেয়েছেন ছাত্রদলের প্যানেল থেকে নার্গিস খাতুন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে জয় পেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের সহসভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ তোফা।
নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসুতে নেতৃত্ব ফিরেছে। নবনির্বাচিত নেতারা যে দায়িত্ব পেয়েছেন, তা বাস্তবায়নে তাদের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ, শিক্ষার্থীদের আস্থা ও প্রত্যাশা পূরণ করা।