চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচনে ভোটারদের গড়ে ১০ মিনিটের মধ্যে ৪০টি ভোট দেওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি ভোট দিতে সময় মিলছে গড়ে মাত্র ২০ সেকেন্ড। দীর্ঘ ৩৬ বছর পর আয়োজিত এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনায়। উৎসবমুখর পরিবেশে ক্যাম্পাস জুড়ে চলছে ভোটগ্রহণ।
সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের নিচতলায় শাহ আমানত হল কেন্দ্রের ১০৩ নম্বর কক্ষে প্রথম ভোট দেন ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন।
তিনি জানান, জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দিলাম। খুবই ভালো লাগছে। আগে ভোটার থাকলেও নিরাপদ পরিবেশ ছিল না। এবার অনেক স্বস্তিতে ভোট দিতে পারছি। আশা করি নির্বাচিতরা প্রশাসনের নয়, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করবেন।’
সাজ্জাদ ভোটার আইডি খুঁজে পেতে সময় নেন তিন মিনিট, আর ৪০টি ভোট দিতে সময় নেন সাত মিনিট। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সময় অনুযায়ী, ভোটারদের সর্বোচ্চ ১০ মিনিটের মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি ও হল সংসদের ১৪টি পদে ভোট দিতে হবে।
চাকসু নির্বাচন হচ্ছে ব্যালট পেপারে, তবে গণনা হবে আধুনিক ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে। এতে হাতে গণনার ঝামেলা ছাড়াই দ্রুত ফলাফল পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ‘অ্যানালগ পদ্ধতিতে গণনা করলে অনেক সময় লাগবে। তাই আমরা ওএমআর পদ্ধতি ব্যবহার করছি। ব্যালট পেপারে থাকবে ২৪ অঙ্কের নিরাপত্তা কোড ও একটি গোপন কোড, যা মেশিনে শনাক্ত করা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যালট পেপার ছাপা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের উপস্থিতিতে এবং সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রেখে। গোপন কক্ষ ব্যতীত সব ভোটকেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।’
ভোট শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যেই ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়া আখতার। তার সঙ্গে ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান ও অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন। তারা ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
উপাচার্য বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে ও উৎসাহের সঙ্গে ভোট দিচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শাটল ট্রেন ও বাসের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।’
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন আশ্বস্ত করে বলেন, ভোট গ্রহণ ও গণনায় কোনো ধরনের অযথা বিলম্ব হবে না।
এবারের চাকসু নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ক্যাম্পাসজুড়ে মোতায়েন রয়েছেন প্রায় ১,৭০০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। তাদের মধ্যে রয়েছে পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন, বিজিবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী, রোভার স্কাউট ও বিএনসিসির সদস্যরা।
র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ ও র্যাব মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আমাদের আটটি মোবাইল টিম ক্যাম্পাসে টহল দিচ্ছে। পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ রয়েছে। আশা করি নির্বাচনও সেভাবেই শেষ হবে।’
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালের পর এবারই প্রথম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে চাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শিক্ষার্থীরা পেতে যাচ্ছেন তাদের গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্ব। নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আশা করছেন একটি কার্যকর ছাত্র সংসদ গঠিত হবে, যারা সত্যিকার অর্থে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কাজ করবে।