ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

‘স্বায়ত্তশাসন ঘোষণা হলেই বিচ্ছিন্নতাবাদী হয়ে যায় না’

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৫, ০৩:৩৩ এএম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন মাইকেল চাকমা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

কোনো অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন দাবি করলেই তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী হয়ে যায় না বলে মন্তব্য করেছেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নেতা মাইকেল চাকমা। তিনি বলেন, ‘আমরা সামরিক বাহিনীর নির্যাতন বন্ধে স্বায়ত্তশাসন চেয়েছিলাম। সেই থেকে আমাদের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ তকমা দেওয়া হচ্ছে।’

শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর: পাহাড়-সমতলের জাতিসত্তাসমূহের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শাখা বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।

সভায় সভাপতিত্ব করেন পিসিপির সাধারণ সম্পাদক শামিন ত্রিপুরা এবং সঞ্চালনা করেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী মিশুক চাকমা।

আলোচনায় আরও অংশ নেন—পিসিপি কেন্দ্রীয় সভাপতি অমল ত্রিপুরা, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী রাবি শাখার সাবেক সভাপতি প্রদীপ মারদী, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম সরোয়ার সুজন, ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) রাবি শাখার সভাপতি রাকিব হোসেন, ছাত্র ফেডারেশনের যুগ্ম আহ্বায়ক আজাদ ইসলাম, রাষ্ট্রচিন্তার কৌশিক দাস কঙ্কন এবং ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকার।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করে মাইকেল চাকমা বলেন, ‘সমতলে ফ্যাসিবাদের নানা চিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা হলেও পাহাড়ে এখনও সামরিক শাসনের অবসান ঘটেনি। শান্তি চুক্তি থাকলেও বাস্তবে শান্তি কতটুকু এসেছে, বলা মুশকিল। বরং হাসিনা আমলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ১১ দফা গোপন নির্দেশনা আজও বহাল রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২৪-এর অভ্যুত্থানের পর আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, অনেক পরিবর্তন হবে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেছেন, প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে—আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি এখনো শূন্য। এক বছর আগেও সেনাবাহিনীর গুলিতে রুবেল ত্রিপুরা নিহত হন। এরপর এক উপদেষ্টা এলাকা পরিদর্শনে এসে বিচার আশ্বাস দিলেও আজও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি।’

পাহাড়ে সেনা উপস্থিতি নিয়ে মাইকেল চাকমা বলেন, ‘পাহাড়ে অস্ত্র উদ্ধারের নামে যা হয়, তা আসলে নাটক। এগুলো পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয় যাতে মানুষের মনস্তত্ত্বে পাহাড়িদের নিয়ে নেতিবাচকতা সৃষ্টি করা যায়। সামরিক শক্তি বারবার এই নাটক মঞ্চায়ন করে।’

রাষ্ট্রকাঠামোতে আদিবাসীদের যথাযথ স্থান নেই উল্লেখ করে সভায় প্রদীপ মারদী বলেন, ‘পাহাড়িদের প্রাপ্তির প্রশ্নটা গত ৫০ বছর ধরেই প্রশ্ন হয়েই রয়েছে। রাষ্ট্রের ক্ষমতা বদলায়, কিন্তু তাদের ভাগ্য বদলায় না। বহু জাতিসত্তা থাকার পরও রাষ্ট্র কাঠামোতে তাদের স্বীকৃতি নেই। বাংলাদেশ যদি বাস্তবেই বহু জাতির দেশ হয়, তাহলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাতেও আদিবাসীদের উপস্থিতি থাকতে হবে।’

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক গোলাম সরোয়ার সুজন বলেন, ‘এই দেশে বারবার পাহাড়িদের অধিকার সংকুচিত করা হয়েছে। আদিবাসীরা প্রথম থেকেই মুক্তিযুদ্ধ ও গণআন্দোলনের অংশ ছিলেন—৬৯, ৭১ বা ২৪-এর অভ্যুত্থানেও।’

তিনি আরও বলেন, অথচ তাদের প্রাপ্তির জায়গা শূন্য। উত্তরে আদিবাসীরা ভূমি হারাচ্ছে, উচ্ছেদ হচ্ছে, পাহাড়ের গাছ কাটা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের আসবাব তৈরিতে, রাবার বাগানের নামে কোটিপতিরা দখল নিচ্ছে আদিবাসীদের জমি।’