ধর্ষণ মামলায় প্রযোজক উইনস্টেইনের বিচার শেষের পথে

ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগে নতুন করে বিচারাধীন হলিউডের সাবেক প্রযোজক হার্ভি উইনস্টেইন শেষ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছেন এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের সামনে।

 তিনি নিজেই সাক্ষ্য দেবেন কিনা- নিউ ইয়র্কে চলমান পুনঃবিচারে এই প্রশ্ন এখন ঘিরে রেখেছে পুরো আদালতপাড়াকে।

তাঁর আইনজীবী আর্থার আইডালা জানিয়েছেন, সাক্ষ্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত নয় এবং ‘গেম টাইম ডিসিশন’ হিসেবে তা বিবেচনা করা হবে। 

তিনি বলেন, ‘শেষ মুহূর্তে সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র তাঁর নিজের।’ 

আইনজীবী আরও জানান, মোমোরিয়াল ডে উইকেন্ডে উইনস্টেইনের এক আইনজীবী অংশীদার তাঁকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করেছেন।

আইডালা মন্তব্য করেন, ‘এই মামলা অনেকাংশেই ‘তিনি বলেছেন, তিনি বলেছিলেন’ এমন বক্তব্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এ অবস্থায় উইনস্টেইন ভাবছেন- মানুষ কি অন্য পক্ষের গল্প শোনার অধিকার রাখে না?’

উইনস্টেইন এই মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনা করছেন এমন খবর প্রকাশ্যে এসেছে একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারের পর, যেখানে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

তবে আগের দুই মামলা- ২০২০ সালের নিউ ইয়র্ক ট্রায়াল এবং পরবর্তী ক্যালিফোর্নিয়া মামলায় তিনি নিজে কখনও সাক্ষ্য দেননি।

এবারের মামলায় অভিযোগ করেছেন তিনজন নারী। তাঁদের মধ্যে প্রাক্তন প্রোডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্ট মিরিয়াম হেইলি দাবি করেন, ২০০৬ সালে উইনস্টেইন তাঁর ম্যানহাটনের অ্যাপার্টমেন্টে তাঁকে জোরপূর্বক ওরাল সেক্সে বাধ্য করেন। 

আরেকজন, অভিনেত্রী হতে চাওয়া জেসিকা ম্যান অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালে ম্যানহাটনের এক হোটেলে তিনি ধর্ষণের শিকার হন। 

এই দুই অভিযোগই ২০২০ সালে উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে হওয়া মূল মামলার ভিত্তি ছিল, যা ২০২৪ সালের এপ্রিলে বাতিল হয়ে যায়।

তৃতীয় অভিযোগ এনেছেন কাজা সোকোলা নামের এক নারী, যিনি দাবি করেন উইনস্টেইন ২০০৬ সালে এক হোটেলে তাঁকে জোর করে ওরাল সেক্সে বাধ্য করেন।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই তিন নারী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন, যেগুলো নিয়ে উইনস্টেইনের আইনজীবীরা তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। 

এফডিসিতে হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় মামলা

বিস্তারিত পড়ুন

প্রসিকিউশন পক্ষ বুধবার সাক্ষ্য দেওয়া শেষ করে, যেখানে একাধিক সাক্ষীকে হাজির করে অভিযোগের পক্ষে কথা বলানো হয়।

বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় প্রতিরক্ষা পক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ। সেখানে ডাক্তারি বিশেষজ্ঞদের ডেকে উইনস্টেইনের পুরুষত্বহীনতা এবং ওষুধের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। 

সোকোলার সাবেক রুমমেট হেলগা রোজ স্যামুয়েলসন আদালতে বলেন, ২০০৫ সালে উইনস্টেইন তাঁদের অ্যাপার্টমেন্টে এসেছিলেন এবং সোকোলার সঙ্গে একটি ঘরে প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু সোকোলা নিজে এই দাবি অস্বীকার করেছেন।

প্রতিরক্ষা দল কট্টরপন্থী রাজনৈতিক ভাষ্যকার ক্যান্ডেস ওউয়েন্সকে আদালতে ডাকার বিষয়টি বিবেচনা করলেও শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। কারণ, সদ্য সন্তান জন্ম দেওয়া ওউয়েন্সের সাক্ষ্যকে গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট ভিত্তি তাদের হাতে নেই। 

এর আগেই আদালত ওউয়েন্স ও জেসিকা ম্যানের মধ্যে কথোপকথনের প্রসঙ্গকে ‘তথ্যহীন’ উল্লেখ করে তা রেকর্ড থেকে বাদ দেয় এবং জুরি বোর্ডকে তা বিবেচনায় না নিতে নির্দেশ দেন।

মামলার শেষ ধাপে উইনস্টেইনের আইনজীবীরা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী মিরিয়াম হেইলির আইনজীবী গ্লোরিয়া অলরেডের জন্য সাবপোনা জারি করলেও সেটি কার্যকর করতে আগ্রহী নয় বলেও জানিয়েছেন আইডালা।

সব মিলিয়ে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন- উইনস্টেইন নিজে সাক্ষ্য দেবেন কি না। যদি না দেন, তাহলে আগামী মঙ্গলবারই উভয় পক্ষের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হবে এবং শেষ হবে এই বহুল আলোচিত মামলা।