মাত্র একদিনের ব্যবধানে ময়মনসিংহ জেলার ছয় থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বদলি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশের সদর দপ্তর থেকে ‘জনস্বার্থে’ জারিকৃত আদেশে এই বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
সোমবার (৫ মে) অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মতিউর রহমান শেখ স্বাক্ষরিত দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে চার ওসির বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়। তার আগের দিন, রবিবার (৪ মে) আরও দুই ওসির বদলি আদেশ জারি হয়।
সোমবার জারি হওয়া আদেশ অনুযায়ী, বদলিকৃত কর্মকর্তারা হলেন, কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম খান শফিক, গৌরীপুর থানার ওসি মির্জা মাজহারুল আনোয়ার, ভালুকা থানার ওসি মো. শামছুল হুদা খান, নান্দাইল থানার ওসি ফরিদ আহমেদ, এদের মধ্যে প্রথম তিনজনকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে এবং ফরিদ আহমেদকে রাজশাহী রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে।
এর আগের দিন বদলি হওয়া কর্মকর্তারা হলেন, হালুয়াঘাট থানার ওসি আবুল খায়ের (বদলি: এপিবিএন), মুক্তাগাছা থানার ওসি মো. কামাল হোসেন (বদলি: বরিশাল রেঞ্জ)।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, এই ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার বাণিজ্য, জুয়ার বোর্ড থেকে অর্থ আদায়, দালাল চক্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর মতো গুরুতর অভিযোগ ছিল। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে এবং পুলিশি সেবার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কয়েকজন ওসির কর্মকাণ্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়, যা পুলিশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। জেলা পুলিশের পক্ষে সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছিল।’
বিশেষ করে গৌরীপুর থানার ওসি মির্জা মাজহারুল আনোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি আগের সরকার আমলে রাজনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন এবং বর্তমানে নতুন প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি নিজেকে এক সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ও একটি ছাত্র সংগঠনের সাবেক নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাও করেন বলে জানা গেছে।
ওসিদের বদলির খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই পুলিশ প্রশাসনের এমন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ ময়মনসিংহ রেঞ্জের নবনিযুক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আতাউল কিবরিয়া ও জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আখতার উল আলমকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, ‘বর্তমান জেলা পুলিশ সুপার যোগদানের পর থেকে থানা পর্যায়ে অনিয়ম বন্ধে নজরদারি শুরু করেন। এরপর ডিআইজি মহোদয়ও বিষয়টি নজরে নিয়ে এই ছয়জন কর্মকর্তার বদলির প্রস্তাব দেন। সবকিছুই জনস্বার্থে করা হয়েছে।’
জেলা পুলিশের এমন সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতে থানা পর্যায়ে পুলিশি সেবার মান উন্নত হবে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আরও স্বচ্ছভাবে কাজ করতে বাধ্য হবেন বলে আশা করছেন সচেতন নাগরিকরা।
আপনার মতামত লিখুন :