বিশ্বখ্যাত দার্শনিক, চিন্তাবিদ ও কবি আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল–এর জীবন ও দর্শনকে পর্দায় তুলে ধরতে এক হতে যাচ্ছে পাকিস্তান ও ইরান। দুই মুসলিম দেশের এই যৌথ উদ্যোগকে দুই জাতির সংস্কৃতিগত বন্ধনের এক নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সম্প্রতি ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার এবং ইরানের গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের মধ্যে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইরানের রাষ্ট্রদূত, পাকিস্তানের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিনিধি, একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এবং পিইএমআরএ (ইলেকট্রনিক মিডিয়া রেগুলেটরি অথরিটি)–এর কর্মকর্তারা।
পাকিস্তান প্রেস এজেন্সি (এপিপি)–এর খবরে বলা হয়েছে, বৈঠকে মন্ত্রী এই প্রস্তাবে আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, ‘ইরানি ও উর্দু ভাষায় নির্মিত এমন একটি যৌথ নাটক হবে আমাদের দুই দেশের সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক।’
আলোচনায় উঠে আসে ইকবালের চিরন্তন কবিতা ও দর্শন, যা পাকিস্তান ও ইরান- উভয় দেশেই যুগে যুগে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বিবেচিত। সময়ের স্রোত পেরিয়েও তার ভাবনা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
বৈঠকে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, দক্ষতা উন্নয়ন, এবং কনটেন্ট বিনিময়সহ পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (মওইউ) স্বাক্ষরিত হয়।
এর আগে চলতি বছরের ৮ আগস্ট, পাকিস্তানের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আল্লামা ইকবালের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী (২০২৭) উপলক্ষে এক বিবৃতিতে জানায়, ইরান ইকবালের জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি একটি উচ্চমানের টেলিভিশন সিরিজ নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে।
পাকিস্তানের সাম্প্রতিক যৌথ প্রযোজনাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ঐতিহাসিক ধারাবাহিক ‘সালাহউদ্দিন আইয়ুবি’, যা তৈরি হয়েছে পাকিস্তানের হুম টিভি ও তুরস্কের সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম টিআরটি–এর যৌথ উদ্যোগে। ২০২৪ সালে প্রচারিত এই সিরিজে তুর্কি শিল্পীরা অভিনয় করেন, আর পাকিস্তানি প্রযোজক হিসেবে যুক্ত ছিলেন হুমায়ুন সাঈদ ও আদনান সিদ্দিকী।
এছাড়া পাকিস্তানে বর্তমানে নির্মাণাধীন আরেকটি ঐতিহাসিক ধারাবাহিক ফাতিমা জিন্নাহ–র জীবনকাহিনি নিয়ে। দেশের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাজল আলি। সিরিজটির শুটিং শেষ হলেও মুক্তির তারিখ এখনো ঘোষণা হয়নি।
জানা গেছে, সেই ধারাবাহিকে আল্লামা ইকবালের চরিত্রে অভিনয় করছেন উসমান মুখতার।
দুই দেশের এই নতুন উদ্যোগ, যেখানে ইকবালের দর্শন, কবিতা ও আদর্শ একসাথে উপস্থাপিত হবে, তা শুধু বিনোদন নয়- বরং পাকিস্তান ও ইরানের সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আরও গভীর করে তুলবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
