চার দশকের অগ্নিময় যাত্রার শেষ প্রহরে দাঁড়িয়ে বিদায়ের ঘণ্টা বাজাল কিংবদন্তি থ্রাশ মেটাল ব্যান্ড মেগাডেথ। বিশ্বজুড়ে কোটি ভক্তের প্রিয় এই ব্যান্ড জানাল, তাদের পরবর্তী স্টুডিও অ্যালবামই হবে শেষ, আর ২০২৬ সালে অনুষ্ঠিত হবে মহাযজ্ঞের মতো বিদায়ী বিশ্বভ্রমণ কনসার্ট।
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কণ্ঠশিল্পী ডেভ মাস্টেইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক আবেগঘন বার্তায় বলেছেন, ‘বেশির ভাগ শিল্পীর নিজের ইচ্ছায় বিদায় নেওয়ার সৌভাগ্য হয় না। আমি বিশ্ব ভ্রমণ করেছি, পেয়েছি অগণিত ভক্ত। সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো তাদের বিদায় জানানো।’
মাস্টেইনের জীবনের গল্প একরকম বিদ্রোহের সঙ্গেই শুরু। ১৯৮৩ সালে মেটালিকা থেকে হঠাৎ বহিষ্কৃত হন তিনি। সে সময়কার দ্বন্দ্ব, ক্ষোভ আর ব্যক্তিগত অপমানকেই শক্তিতে রূপান্তর করে গড়ে তোলেন নতুন এক সাম্রাজ্য, মেগাডেথ।
মাত্র দুই বছরের মাথায়, ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম অ্যালবাম ‘কিলিং ইজ মাই বিজনেস... অ্যান্ড বিজনেস ইজ গুড’। সেই অ্যালবাম থেকেই শুরু হয় এক উত্থান, যা থ্রাশ মেটালের ইতিহাস পাল্টে দেয়। একসময় মেটালিকা, স্লেয়ার ও অ্যানথ্রাক্সের সঙ্গে মিলে ‘বিগ ফোর’-এর অংশ হয়ে মেগাডেথ বিশ্ব সঙ্গীতমঞ্চে নিজস্ব অবস্থান পোক্ত করে।
মেগাডেথের সেরা অধ্যায়ের কথা উঠলে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয় ১৯৯০ সালের অ্যালবাম ‘রাস্ট ইন পিস’-কে। সেই সময়কার লাইনআপ: ডেভ মাস্টেইন, ডেভিড এলেফসন, মার্টি ফ্রিডম্যান আর নিক মেনজা। এই লাইনআপকে আজও ধরা হয় ব্যান্ডের সোনালি যুগ হিসেবে। এই চার জনের মিলিত দক্ষতা গড়ে তুলেছিল এক অনন্য শক্তি, যা কেবল মেগাডেথ নয়, পুরো মেটাল জগতের জন্য হয়ে উঠেছিল দৃষ্টান্ত। অনেক সমালোচকও একে ‘মেগাডেথের সেরা লাইনআপ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
কেবল মেটালের সুরকেই নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলেনি মেগাডেথ, বরং পুরো প্রজন্মের কাছে হয়ে উঠেছে বিদ্রোহ, প্রতিরোধ আর আত্মপ্রকাশের এক জীবন্ত প্রতীক। মাস্টেইনের রিফের ঝড়, গানের কথায় সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিবাদ, ব্যক্তিগত সংগ্রাম আর আবেগঘন টানাপোড়েন, সঙ্গে মঞ্চে বিস্ফোরক উপস্থিতি—সব মিলিয়েই মেগাডেথ গড়ে তুলেছিল নিজস্ব সাম্রাজ্য।
মেগাডেথের প্রতিটি কনসার্ট যেন ছিল একেকটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যেখানে ভক্তরা খুঁজে পেয়েছে উন্মাদনা আর মুক্তির স্বাদ। এখন সেই সাম্রাজ্য গুটিয়ে নিচ্ছে তারা, তবে বিদায়ের আগে শেষবারের মতো বিশ্বকে উপহার দিতে চান এক ঐতিহাসিক সফর।
শেষ অ্যালবামের নাম কিংবা মুক্তির তারিখ এখনো অজানা। তবে ডেভ মাস্টেইন জানিয়েছেন, ভক্তরা যেন এই বিদায়কে বেদনার মুহূর্ত হিসেবে না দেখে, বরং চার দশকের গৌরবময় যাত্রাকে উদযাপন করে। কারণ মেগাডেথের বিদায় মানে শুধু এক ব্যান্ডের অবসান নয়, বরং সংগীত ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের মহিমান্বিত সমাপ্তি।