বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৫, ১২:০৭ পিএম

মানবদেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৫, ১২:০৭ পিএম

মানবদেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ

ছবি : সংগৃহীত।

মানবদেহ একটি অত্যন্ত দক্ষ যন্ত্রের মতো কাজ করে। এ যন্ত্রটি সর্বদা ৩৭°C (৯৮.৬°F) তাপমাত্রা বজায় রাখার চেষ্টা করে। এই প্রক্রিয়াটি থার্মোরেগুলেশন (Thermoregulation) নামে পরিচিত এবং এটি বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  

যদি শরীরের তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে যায় বা কমে যায়, তবে এটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তবে শরীর কীভাবে এই সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখে? এর উত্তর লুকিয়ে আছে মস্তিষ্ক, ত্বক, রক্ত সংবহন ব্যবস্থা, পেশী ও বিপাকক্রিয়ার (metabolism) একত্রিত কার্যক্রমের মধ্যে। আসুন, এই বিস্ময়কর প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে জানি আজ।  

হাইপোথ্যালামাস: শরীরের থার্মোস্ট্যাট

শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্রে রয়েছে মস্তিষ্কের একটি ছোট কিন্তু শক্তিশালী অংশ, যার নাম হাইপোথ্যালামাস। এটি মস্তিষ্কের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।  

হাইপোথ্যালামাস শরীরের বিভিন্ন অংশে থাকা তাপমাত্রা সংবেদনশীল রিসেপ্টর (thermoreceptors) থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী শরীরকে উত্তাপ বাড়ানো বা কমানোর সংকেত পাঠায়।

# যদি শরীর অত্যধিক গরম হয়ে যায়, তাহলে এটি ঘাম ঝরানো ও রক্ত সংবহন বাড়ানোর মাধ্যমে তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা করে।

# যদি শরীর অত্যধিক ঠান্ডা হয়ে যায়, তাহলে এটি শীতকাঁপুনি (shivering) সৃষ্টি করে এবং শরীরের রক্ত সংবহন কমিয়ে তাপমাত্রা ধরে রাখার চেষ্টা করে।  

এই প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে এবং শরীরকে একটি নিরাপদ তাপমাত্রায় রাখে।  

গরম আবহাওয়ায় শরীর কীভাবে ঠান্ডা হয়?

যখন শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় (যেমন গরম আবহাওয়া, ব্যায়াম, জ্বর বা পানিশূন্যতা), তখন এটি ঠান্ডা হওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে:  

 ঘাম ঝরানো: বাষ্পীভবনের মাধ্যমে শীতলকরণ
ঘাম (sweat) হল শরীরের প্রধান শীতলীকরণ ব্যবস্থা। ত্বকের ঘামগ্রন্থি (sweat glands) তরল নিঃসরণ করে, যা বাষ্পীভূত (evaporate) হয়ে শরীর থেকে তাপ বের করে দেয়।  

তবে, ঘামের কার্যকারিতা বাতাসের আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে।

# নিম্ন আর্দ্রতায় (low humidity) ঘাম দ্রুত বাষ্পীভূত হয় এবং শরীর সহজেই ঠান্ডা হয়।

# উচ্চ আর্দ্রতায় (high humidity) ঘাম সহজে শুকায় না, ফলে শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে হিটস্ট্রোক (heatstroke) এর ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

রক্তনালীর সম্প্রসারণ (Vasodilation): ত্বকের মাধ্যমে তাপ বের করা

গরম হলে ত্বকের রক্তনালী প্রসারিত (vasodilation) হয়, যাতে বেশি উষ্ণ রক্ত ত্বকের পৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারে এবং তাপ বাইরে নির্গত হতে পারে।

# এ জন্য গরমে ত্বক লালচে বা ফোলা দেখায়।

# এটি তাপ বিকিরণের (radiation) মাধ্যমে শরীর ঠান্ডা করতে সাহায্য করে।

বিপাক ক্রিয়ার ধীরগতি

যখন শরীর অত্যধিক গরম অনুভব করে, তখন এটি বিপাক ক্রিয়া (metabolism) ধীর করে, যাতে অভ্যন্তরীণ তাপ উৎপাদন কমে যায়। এজন্য গরম আবহাওয়ায় অনেকেরই অবসাদগ্রস্ত বা ক্লান্ত লাগে।

ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীর কীভাবে উষ্ণ থাকে?

যখন শরীর ঠান্ডা পরিবেশের সংস্পর্শে আসে, তখন এটি তাপ ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে:  

শীতকাঁপুনি (Shivering): পেশীর মাধ্যমে উত্তাপ উৎপাদন

শীতকাঁপুনি হল শরীরের একটি স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া, যেখানে পেশীগুলি দ্রুত সংকুচিত ও প্রসারিত হয়, যা উষ্ণতা উৎপন্ন করে।

# শীতকাঁপুনি শরীরের তাপ উৎপাদন পাঁচ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।

# তবে এটি অনেক শক্তি ব্যয় করে, ফলে দীর্ঘ সময় ধরে শীতকাঁপুনি হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

রক্তনালীর সংকোচন (Vasoconstriction): তাপ ধরে রাখা

ঠান্ডার সময় ত্বকের রক্তনালী সংকুচিত (vasoconstriction) হয়, যাতে রক্ত প্রবাহ কমে এবং তাপ শরীরের কেন্দ্রের দিকে ধরে রাখা যায়।

# এজন্য হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায় এবং ত্বক ফ্যাকাসে দেখায়।

# দীর্ঘস্থায়ী ঠান্ডায় তুষারদাহ (frostbite) হওয়ার ঝুঁকি থাকে।  

গুজবাম্প (Goosebumps) এবং লোম দাঁড়ানো

ঠান্ডায় শরীরে গুজবাম্প (goosebumps) হয়, যার ফলে লোম দাঁড়িয়ে যায়। এটি গরম বাতাস আটকে শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে।  

বাদামী চর্বি (Brown Fat) সক্রিয়করণ

শিশু এবং কিছু প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে বাদামী চর্বি (brown fat) থাকে, যা ক্যালোরি পুড়িয়ে তাপ উৎপন্ন করে।

# এটি মূলত গলা, কাঁধ এবং উপরের পিঠে থাকে।

# গবেষণায় দেখা গেছে, ঠান্ডা পরিবেশে থাকলে বা ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে বাদামী চর্বি সক্রিয় হয়ে শরীরকে গরম রাখতে সাহায্য করে।  

যখন থার্মোরেগুলেশন ব্যর্থ হয়: তাপমাত্রা সংক্রান্ত বিপদ

যদি শরীর তার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তবে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে:  

অতিরিক্ত গরম হওয়া (Hyperthermia)

# হিট এক্সহস্টন (Heat exhaustion): মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, অতিরিক্ত ঘাম।  

# হিটস্ট্রোক (Heatstroke): শরীরের তাপমাত্রা ৪০°C (১০৪°F) ছাড়িয়ে গেলে, যা জীবন-সংকটজনক হতে পারে।  

অতিরিক্ত ঠান্ডা হওয়া (Hypothermia)

যখন শরীরের তাপমাত্রা ৩৫°C (৯৫°F) এর নিচে নেমে যায়, তখন হাইপোথার্মিয়া হতে পারে।  

# প্রাথমিক লক্ষণ: তীব্র শীতকাঁপুনি, ধীর শ্বাস, বিভ্রান্তি।

# গুরুতর অবস্থা: অজ্ঞান হয়ে পড়া, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট।

মানবদেহের থার্মোরেগুলেশন ব্যবস্থা আমাদের বিভিন্ন পরিবেশে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। কিন্তু চরম তাপমাত্রা শরীরের এই প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা ব্যর্থ করতে পারে। তাই আমাদের সঠিক পোশাক পরা, পর্যাপ্ত পানি পান করা, এবং শরীরের সংকেতগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া জরুরি।  

পরের বার যখন আপনি ঘামবেন বা গুজবাম্প দেখবেন, মনে রাখবেন- এটি আপনার শরীরের নিজস্ব তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র কাজ করছে!  

আরবি/এসএস

Link copied!