নীলা পাথর, যাকে ইংরেজিতে Blue Sapphire বলা হয়। এটি হাজার বছর ধরে রহস্য, আধ্যাত্মিক শক্তি এবং গ্রহ-নির্ভর জ্যোতিষশাস্ত্রের সঙ্গে যুক্ত।
এটি সৌন্দর্য, শক্তি ও প্রভাবের প্রতীক হিসেবেও স্বীকৃত। জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, শনি গ্রহের প্রভাবে যারা কষ্ট পাচ্ছেন, তাদের জন্য পাথরটি হতে পারে এক অলৌকিক সহায়ক।
তবে নীলা ধারণ করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক জানা দরকার, কারণ এটি যেমন উপকার করতে পারে, তেমনি ভুল হাতে বিপরীত ফলও দিতে পারে।
এ ফিচারে আমরা জানব, নীলা পাথর আসলে কী, নীলা কারা পরবেন, নীলা কীভাবে কাজ করে, নীলা আংটি পরার নিয়ম, নীলা ধারণ করলে কী হয় ও নীলার উপকারিতা ও সতর্কতা।
নীলা পাথর কী?
নীলা একটি দামী রত্নপাথর, যা করুন্ডাম নামক খনিজ থেকে তৈরি। এটি সাধারণত গাঢ় নীল বর্ণের হয়, তবে হালকা থেকে গাঢ় রঙের বিভিন্ন ভ্যারিয়েশন থাকতে পারে।
এটি প্রধানত শ্রীলঙ্কা, ভারত, মিয়ানমার ও অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়।
জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, নীলা হলো শনি গ্রহের প্রতিনিধিত্বকারী রত্ন। তাই এটি শনির খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে এবং ভালো প্রভাব বাড়িয়ে তোলে।
নীলা কাদের পরা উচিত?
নীলা পাথর কারা পরবেন, তা নির্ভর করে জন্মছক অনুযায়ী শনির অবস্থানের ওপর। নিচের কয়েকটি ক্যাটাগরিতে পড়ে এমন ব্যক্তিদের জন্য নীলা উপকারী হতে পারে।
যাদের মকর বা কুম্ভ রাশি। যাদের জন্মছকে শনি গ্রহ উচ্চস্থানে বা উপকারী হিসেবে রয়েছে। যাদের সাড়ে সাতি বা ধৈয়া চলছে। তাদের জীবনে হঠাৎ বাধা, আর্থিক ক্ষতি, ক্যারিয়ারে স্ট্যাগনেশন বা বিচার-সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যাদের রাশিফল অনুযায়ী শনি যোগ্য লাভ দিতে সক্ষম।
তবে অবশ্যই জ্যোতিষ পরামর্শ ছাড়া কেউ নীলা না পরাই ভালো। কারণ ভুল হাতে এই পাথর গুরুতর মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
নীলা কীভাবে কাজ করে?
নীলা পাথর চটজলদি কাজ করা এক বিশেষ রত্ন। ধারণ করার পর এর প্রভাব সাধারণত ২৪ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অনুভব করা যায়। এটি মূলত পরিধানকারীর জীবনে শনির ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি করে। যেমন:-
দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য এবং ক্যারিয়ারে স্থিতি আনে। আর্থিক উন্নতি ঘটায়। আত্মবিশ্বাস ও মনঃসংযোগ বাড়ায়। শারীরিক অসুস্থতা, বিশেষত হাড়, স্নায়ু বা বাতজাতীয় রোগে উপকার দেয়।
বিচারিক সমস্যা, মামলা-মোকদ্দমা বা সরকারি জটিলতায় সহায়তা করে। এ ছাড়াও যারা কঠোর পরিশ্রম করেও ফল পাচ্ছেন না, তাদের জীবনে নীলা আশ্চর্য পরিবর্তন আনতে পারে।
নীলা আংটি কারা পরতে পারবেন?
নীলা সাধারণত আংটির মাধ্যমে ধারণ করা হয়। নিচের নিয়মগুলো মেনে চললে এর ফলাফল ভালো হয়:-
রাশি অনুযায়ী যাদের শনি অনুকূল, তারাই পরবেন। আংটি হওয়া উচিত রূপা বা সাদা সোনা দিয়ে তৈরি। নীলা পাথরটি কমপক্ষে ৫ ক্যারেট হতে হবে এবং স্বচ্ছ ও দাগহীন হওয়া জরুরি।
এটি শনিবার, সূর্যোদয়ের আগে পরা উচিত। আংটি ধারণের আগে শুদ্ধ জলের সঙ্গে কাঁচা দুধ ও গঙ্গাজল মিশিয়ে পাথরটি শুদ্ধ করতে হয়।
শনির মন্ত্র ‘ওম প্রাং প্রীং প্রৌং সঃ শনাইশ্চরায় নমঃ’ এই মন্ত্র ১০৮ বার জপ করে ধারণ করলে ফল ভালো হয়।
নীলা ধারণ করলে কী হয়?
নীলা ধারণের পর ইতিবাচক কিছু পরিবর্তন দ্রুতই টের পাওয়া যায়, যদি এটি উপযুক্ত হাতে পড়ে।
ইতিবাচক ফলাফল: বাধা দূর হয়, কাজ দ্রুত হতে শুরু করে, আর্থিক অগ্রগতি ও লাভ হয়, মানসিক প্রশান্তি ও স্থিতি আসে, সমাজে সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, পুরোনো ঋণ পরিশোধের সুযোগ তৈরি হয়।
নেতিবাচক লক্ষণ (যদি অনুপযুক্ত হয়): মাথাব্যথা, উদ্বেগ, দুঃস্বপ্ন, অর্থহানি বা হঠাৎ দুর্ঘটনা, সম্পর্কের অবনতি ও কাজকর্মে বিঘ্ন।
তাই পাথরটি ধারণের পর প্রথম কয়েক দিন শরীর ও মনের অবস্থা মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
উল্লেখ্য, নীলা পাথর পরার আগে ত্রয়োদশী বা অমাবস্যা তিথিতে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু সময় হাতে ধরে থাকা উচিত। এতে বোঝা যাবে এটি আপনার জন্য অনুকূল কি না।
আপনার মতামত লিখুন :