ইলিশ মানেই বাঙালির আবেগ, উৎসব আর রসনা বিলাস। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের কাছে ইলিশ শুধু মাছ নয়, এটা সংস্কৃতির প্রতীক। তবে দেশীয় বাজারে উৎপাদিত ইলিশ যতটা জনপ্রিয়, তার চেয়েও বেশি চাহিদা বাংলাদেশি ইলিশের। দাম স্থানীয় ইলিশের তুলনায় অন্তত দ্বিগুণ, তবু ক্রেতার চাহিদা কমে না। প্রশ্ন জাগে, কেন ভারতের বাজারে বাংলাদেশি ইলিশের এত কদর?
স্বাদের অনন্যতা
বাংলাদেশি নদ-নদীতে জন্ম নেওয়া ইলিশের স্বাদ ও ঘ্রাণ তুলনাহীন। পদ্মা, মেঘনা কিংবা তেঁতুলিয়ার পানির প্রকৃতি—পলি, খনিজ ও স্রোতের কারণে ইলিশ হয় তেলসমৃদ্ধ ও নরম মাংসল। রান্নায় এর সুবাস ছড়িয়ে পড়ে ঘরে ঘরে। এ তুলনায় ভারতীয় ইলিশ অনেকটাই শুকনো ও স্বাদে কম সমৃদ্ধ।
ঐতিহ্যের টান
ইলিশ বাঙালি জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দুর্গাপূজা থেকে শুরু করে বিয়ে বা পারিবারিক অনুষ্ঠান—সব উৎসবেই ইলিশ চাই-ই চাই। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ মনে করেন, আসল ইলিশ বাংলাদেশ থেকেই আসে। তাই বাংলাদেশের ইলিশ তাদের কাছে শুধু মাছ নয়, আবেগ ও ঐতিহ্যের প্রতীক।
সরবরাহ ও চাহিদা বাড়তি
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। কখনো আবার একেবারেই বন্ধ থাকে। এই দুষ্প্রাপ্যতা ইলিশের চাহিদাকে আরও উসকে দেয়। ফলে বাংলাদেশি ইলিশ পাওয়া মানেই বিশেষ কিছু—যেন উৎসবের বাড়তি আনন্দ।
বাজারে সামাজিক প্রতীক
কলকাতার বাজারে এক কেজি বাংলাদেশি ইলিশের দাম প্রায় স্থানীয় ইলিশের দ্বিগুণ বা তিনগুণ। তবুও ক্রেতারা সেই বাড়তি দাম দিতেই রাজি। কারণ অতিথিকে বাংলাদেশি ইলিশ খাওয়ানো মানেই আলাদা সম্মান দেখানো। সামাজিক মর্যাদার সঙ্গেও জড়িয়ে গেছে এই মাছ।
সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সেতুবন্ধন
ইলিশ একসূত্রে বেঁধেছে দুই বাংলার রসনা ও সংস্কৃতি। এ মাছ শুধু ব্যবসায়িক লেনদেনের অংশ নয়, বরং আবেগ ও সাংস্কৃতিক যোগসূত্রের প্রতীক। বলা যায়, বাংলাদেশের নদীর স্বাদ আর ভারতের উৎসব মিলেই ইলিশকে করেছে দুই বাংলার বন্ধনের সেতু।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন