প্রতি বছর নতুন করে আমরা শুনি জলোচ্ছ্বাসের খবর, দেখি নদীভাঙনের ছবি, আর অনুভব করি উপকূলের মানুষদের অসহায়তা। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপের প্রভাবে সারা দেশেই টানা বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।
এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে অফিসগামী কর্মজীবী, শিক্ষার্থী ও নিম্নআয়ের মানুষ। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলগুলো। জনজীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি।
এই ফটো-স্টোরিটির প্রতিটি ছবির ফ্রেমে ধরা পড়েছে বেঁচে থাকার সংগ্রাম, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও জনভোগান্তি।

সকালে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণ ও ঘণ্টায় ৪৬ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া ঝোড়ো বাতাসে বেড়িবাঁধের বাইরের অস্থায়ী ঘরবাড়ি ও ছোট ছোট স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরের নদীসংলগ্ন সড়কেও পানি ঢুকে পড়ে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বহু পরিবার।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় বেড়িবাঁধের বাইরের কিছু এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষিজমিতে হাঁটু সমান পানি হয়ে গেছে। ভোগান্তিতে আছে গবাদিপশুও।

বাড়ির উঠান, দরজার চৌকাঠ সবই পানির নিচে। টানা বৃষ্টি ও জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে ভোলার এই গ্রামটি। জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ যেন হারিয়ে গেছে এখানে। ঘরে খাবার নেই, রান্নার ব্যবস্থা নেই; সব মিলিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষজন।

জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের করমজলে পানি বেড়েছে আড়াই ফুট। এতে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বনে গাছের গোড়া পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। এটি শুধু বনের সংকট নয়, সমগ্র জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। লবণাক্ততা, নদীভাঙন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনও আর নিরাপদ নয়।

প্রতি বছর এমন দুর্যোগ আসে, কিছুদিন আলোচিত হয়, তারপর হারিয়ে যায় আলোচনার কেন্দ্র থেকে। কিন্তু উপকূলের মানুষের কাছে এই দুর্যোগই জীবনযাপনের অংশ হয়ে আছে।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় তাদের জীবনের নিত্যসঙ্গী, আর রাষ্ট্রীয় অবহেলা যেন তার স্থায়ী ছায়া। ছবি আর প্রতিবেদনে যে কষ্ট ধরা পড়ে, তা আসলে টিকে থাকার এক মৌন আর্তনাদ।
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত, অব্যবস্থাপনা, দুর্বল অবকাঠামো এবং জরুরি সহায়তার ঘাটতি- সব মিলিয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মানবিক সংকট আরও তীব্রতর হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :