তালশাঁস কিংবা Ice Apple যে নামই বলি না কেন বর্তমানে এটি গ্রীষ্মকালীন অন্যান্য ফলগুলোর মতোই বেশ জনপ্রিয়। কেবল বাংলাদেশই নয় বরং এশিয়ার অন্য সব দেশগুলোতে তাল শাঁস এখন বহুল পরিচিত।
রসালো এ ফল খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। গরমে শরীর ও পেট ঠাণ্ডা রাখে তালের শাঁস। এছাড়া বিভিন্ন শারীরিক সমস্যারও সমাধান করে এই ফল। তালের শাঁসে থাকে আয়োডিন, মিনারেলস, পটাশিয়াম, জিংক ও ফসফরাস। বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর তালের শাঁস নানা রোগের সমস্যা সমাধানে কাজ করে।
খাদ্যগুণ :
তালের ফল এবং বীজ দুটিই বাঙালি খাদ্য। তালের ফলের ঘন নির্যাস থেকে তাল ফুলুরি তৈরী হয়। যদিও কাঁচা ও পাকা দুই অবস্থাতেই তালের বীজ খাওয়া হয়। কচি তালের বীজের মধ্যে থাকে মিষ্টি রস ভরা তালশাঁস।
তাল গাছের কাণ্ড থেকেও রস সংগ্রহ হয় এবং তা থেকে গুড়, পাটালি, মিছরি, তাড়ি (একপ্রকার চোলাই মদ) ইত্যাদি তৈরি হয়।
তালে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি, জিংক, পটাশিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়াম সহ আরো অনেক খনিজ উপাদান। এর সাথে আরো আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও এ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান। তবে তাল কেনার সময় নরম তাল কেনা উচিত। কারণ বেশি শক্ত তাল হজম করতে অনেকেরই সমস্যা হতে পারে।
তালের শাঁস যেহেতু পানি সমৃদ্ধ। ফলে গরমে শরীরের বাড়তি পানির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। পানি ও পানি জাতীয় খাবারের পাশাপাশি সুমিষ্ট এই ফল গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে আপনাকে স্বস্তি দেবে।
কচি তালশাঁসের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন-
তালের শাঁসে থাকা ক্যালসিয়াম হাঁড় গঠনে ভূমিকা রাখে। ভালো রাখে দাঁতও।
উচ্চমাত্রায় সোডিয়াম এবং পটাসিয়াম মেলে তালের শাঁসে, যা শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। ফলে গরমের ক্লান্তি দূর হয়।
আয়রনের ভালো উৎস এই ফল। নিয়মিত খেলে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতার মতো সমস্যাও দূর হয়।
তালশাঁসে রয়েছে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করতে সাহায্য করে।
আঁশ সমৃদ্ধ তালের শাঁস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমের গণ্ডগোল থেকে দূরে থাকা যায়। পাশাপাশি ভালো থাকে অন্ত্রের স্বাস্থ্য।
শরীরের জন্য উপকারী ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স মেলে এতে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়।
লিভারের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে তালের শাঁস। এটি লিভার থেকে ক্ষতিকর ও দূষিত পদার্থ বের করে দেয়।
তালের শাঁস শরীরের কোষের ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুল পড়া ইত্যাদি রোধ করতে সাহায্য করে ফলটি।
তালশাঁস খাওয়ার ঝুঁকি :
তালশাঁসের যদিও তেমন কোন ঝুঁকি নেই, তবে অধিক পরিপক্ব হয়ে যাওয়া তালশাঁস খেতে যেমন শক্ত তেমনি হজম করতেও সমস্যা হতে পারে। তাই কেনার সময় কচি শাঁস বাছাই করুন।
গর্ভাবস্থায় তালশাঁস খাওয়ার প্রচুর সুবিধা থাকা সত্বেও পরিমিত খাচ্ছেন কি না তা খেয়াল রাখতে হবে। কেননা এই ফলে কিছু পরিমাণ গ্লুকোজ থাকায় গর্ভবতী মায়ের গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। পরিমাণের অধিক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটে ব্যাথা হতে পারে। অর্থাৎ তালশাঁস খাওয়ার আগে নিজের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। হজমের সমস্যা এবং পেটের ব্যথা এড়ানোর জন্য সুপক্ক ফল কিনতে ভুলবেন না।
আপনার মতামত লিখুন :